কঠোর লকডাউনে অক্সিজেনের ও জুহাতে দাবী করছেন দ্বিগুন ভাড়া দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে পিছিয়ে নেই হবিগঞ্জও। সবমিলিয়ে এক ধরণের বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে হবিগঞ্জবাসীর। এই সংকটময় সময়ে যে যেভাবে পারছেন বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। সদর হাসপাতালের সরকারি দু’টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও রোগী বাড়ায় স্বজনরা দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে রীতিমতো গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করেছে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও মালিকরা।
ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, হবিগঞ্জ থেকে সিলেটের ভাড়া যেখানে আগে ২২শ-২৫শ টাকা নেয়া হতো সেখানে সংকটময় পরিস্থিতিতে তারা দাবি করছে ৫-৬ হাজার টাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, আমাদের অক্সিজেন কিনতে হয় বেশি দামে। এর চেয়ে কম ভাড়ায় গেলে মালিককে ভাড়া দিয়ে বেশি কিছু থাকে না। অ্যাম্বুলেন্স চালক এমন দাবি করলেও ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা এটিকে রীতিমতো নৈরাজ্য বলছেন জানা যায় জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ২০ লক্ষাধিক লোকের একমাত্র চিকিৎসাস্থল হবিগঞ্জ সদর আধুনিক সদর হাসপাতালটি প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন কয়েক’শ রোগী আর।
চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীকেই সামান্য অজুহাতে প্রেরণ করা হয় ঢাকা কিংবা সিলেটে,এই সুযোগ কাজে লাগায় অসাধু কিছু অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সম্প্রতি মহামারী করোনায় কেউ মারা গেলে কিংবা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা-সিলেট যেতে হলে প্রয়োজন পড়ে অ্যাম্বুলেন্সের। আর এ সময়ই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভাড়া নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। উভয়পক্ষকে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। এ নিয়ে অনেক সময় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সৃষ্টি হয় জটলা। কোনো কোনো সময় রোগী বহন করা নিয়ে চালকদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
সচেতন মহলের অভিমত এসব বন্ধ করা না গেলে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে,সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের সামনে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে ২০-২৫টি অ্যাম্বুলেন্স। যদিও সদর হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স দাড় করিয়ে রাখার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু কতিপয় চালকরা আড়াইশ শয্যার হাসপাতালটির জায়গা দখল করে বানিয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। আবার কোন চালক গাড়ির ভিতরে বসা থাকলেও অনেকেই হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে খোঁজেন ট্রিপ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক জানান,জীবন বাজি রেখে করোনা রোগীর সাথে গিয়েও যদি কয়টা টাকা বেশি না পাই তাহলে কেমনে হয় বলুনতো
কথা হয় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা শায়েস্তাগঞ্জের ইলিয়াছুর রহমান নয়ন এর সাথে, তিনি জানান অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ভাড়া নিয়ে সাধারণ রোগীদের সাথে রীতিমতো জুলুম শুরু করেছে। আগে সিলেটে যেতে দিতাম ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর এখন অক্সিজেনের ওজুহাত দেখিয়ে তারা দাবি করে বসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাহুবল থেকে আসা রোগীর স্বজন ইমন বলেন, কোনো করোনা রোগী মারা গেলেতো আর কথাই নেই; তারা তখন দাবি করে ১০ হাজার টাকা রোগীর স্বজনরা এসব অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন হাসপাতাল হচ্ছে এ অঞ্চলের রোগীদের নির্ভরতার স্থান,এখানে অধিকাংশ সময় জরুরী চিকিৎসার রোগীদের নিয়ে আসা হয়। কিন্তু রোগীরা আনা-নেওয়ার সময় নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও ড. মোমিন উদ্দিন বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা হাসপাতালে রীতিমতো নৈরাজ্য চালাচ্ছে। অবৈধভাবে তারা সদর হাসপাতালের জায়গা দখল করে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে। এর আগেও ডিসি মহোদয় উদ্দ্যোগ নিয়ে এই অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে দিয়েছিলেন কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দখল করে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন ডিসি মহোদয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নিলে হয়তো অবৈধ স্ট্যান্ডটি সরানো সম্ভব হবে,হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জানান, কোনো চালক যদি মহামারীর এ সময়ে অতিরিক্ত ভাড়ার নামে জুলুম করে থাকে তবে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর ও চালকের ঠিকানা দিয়ে অভিযোগ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।