সারা দেশে করোনার কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউন থাকায় খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কাজও প্রায় বন্ধ ছিলো। লকডাউনে শেষ তাই কাজের আশায় হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাজারে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত শ্রমিকের হাট বসে। সেখান থেকে দরদাম করে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কাজেও নিচ্ছে কম, বললেন বাজারে কাজের আশায় বসে থাকা দিনমজুররা। বৃহস্পতিবার সকালে মাধবপুর উপজেলা রিক্সাপট্টির সামনে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জনের একদল দিনমজুর কাজের আশায় তাদের কাজের সরঞ্জাম সামনে রেখে বসে আছেন। চোখে মুখে তাদের হতাশা। সবার চোখ যেন খুঁজছে একজন লোক। যে এসে বললেন কাজ করবেন ? দরদাম করে নিয়ে যাবে বাসায় কাজের জন্য। বিনিময়ে ওই দিনমজুর পাবে দুপুরের খাবার ও ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। মাধবপুর বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আসে। তারা কেউ কারও আত্মীয় নয়। তথাপি দেখে মনে হবে তারা একে অপরের কাছের মানুষ। একটা কাজ পাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে তারা লাইন ধরে সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলমান রয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দাপট। যার কারণে পুরো দেশ স্থবির হয়ে গেছে। থমকে গেছে সকল কর্মকান্ড। সব চাইতে বেশি প্রভাব পড়েছে এই সব দিনখাটা, দিন আনা মজুরদের জীবনে। সংসার চালানোর মতো তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তাদের। মানুষের বাড়িতে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করেই চলে তাদের সংসার। প্রতিদিন সকালে কাজের আশায় আসা শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে প্রায়ই খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। পরিবারে তাদের প্রত্যেকের পরিবারে রয়েছে ৩ থেকে ৫ জন সদস্য।
আদাঐর ইউনিয়নের মিঠাপুকুর গ্রামের মুক্তার মিয়া বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করে কাজের সন্ধানে মাধবপুরে আসি। করোনার আগে প্রতিদিনই কাজ পেতাম। করোনার লকডাউনের কারণে তো বাজারেও আসতে পারতাম না। কদিন হলো লকডাউন শেষ তাই আবারও কাজের জন্য বাজারে আসছি। কিন্তু কোন কাজ পাচ্ছি না। কাজ না পেলে খাবো কি ? সংসারে তো সদস্য অনেক।
হরিশ্যামা গ্রামের অহিদ মিয়া জানান, হারা গবীর মানুষ হামার তো আর আবাদি জমি নাই। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। হামার ছাও কে দেখবে কাম না করলে খামু কি ? কেউ তো ঠিক মতো কামত ডাকছে না। দিনমজুর শ্রমিকের খোজে আসা মিঠাপুকুর গ্রামের মিজান মিয়া বলেন, বাড়িতে ইটের কাজ করছি, রাস্তায় বালু পড়ে আছে তাই দুই জন শ্রমিক দরকার। দুই জনকে নিলাম এক বেলা খাওয়ায়ে সাড়ে ৩শ টাকা দিতে হবে। মাধবপুর হাট-বাজারের সমিতির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে তো কঠোর বিধিনিষেধ আর লকডাউন লেগেই ছিলো। গত ১১ জুলাই থেকে লকডাউন নেই। বাজারের সব দোকানপাট খোলা রয়েছে। তবে প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ বাজারে কাজ পাওয়ার আশায় শ্রমিকরা আসে। বর্তমানে তাদের কাজ কম পাওয়াটা অনেকটা কষ্টের ব্যাপার। করোনায় মানুষের হাতের অবস্থা তেমন ভাল নেই।