কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা সেক্টরে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। এই করোনা কালীন সময়টাতে এ জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে হারিয়ে গেছে এসব ছাত্রীর সোনালী স্বপ্ন।
এমনি এক বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলো খানা ইউনিয়নের সারডব আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ স্কুলটিতে নবম শ্রেণিতে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৯জন। করোনাকালীন এ সময়টাতে ৮ জনেরেই বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। জানার পর মর্মাহত হয়েছেন ওই এলাকার স্থানীয় অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকরা। উদ্বিগ্ন হয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সারডোব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই নবম শিক্ষার্থী নার্গিস খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন,আমার ক্লাসে ৮ জন বান্ধবী ছিল। এখন আমাদের ক্লাসে শুধু আমি আছি। করোনাকালীন সময়ে ৮ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমি খুব একটা দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। বাবা মাকে বললাম আমি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না। ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন ,আমার চিন্তা ভাবনা আছে। পড়াশুনা শেষ করে মানুষের মত মানুষ হবো তার পরেই না বিয়ে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান সরকার জানান,দীর্ঘ দিন করোনার প্রভাব থাকার কারনে তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে তেমন যোগাযোগ করতে পারি নাই। তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি কম দেখে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
এদিকে সদরের কাঁঠালবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে এই স্কুলে ৮ম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪ জন ছাত্রীর বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।
কাঁঠালবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জানান, দূর্যোগকালীন সময়ে আমাদের অজান্তে ২৪ জন ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হয়েছে। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের ফিরি আনতে চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।
এ বিষয়ে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের পরিদর্শক মোঃ মেহবুব হাসান জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সদরের সারডোব আদর্শ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে যেটা জানতে পেড়েছি যে নবম শ্রেণির ৯ জন ছাত্রী মধ্যে ৮ জনের বিয়ে হয়ে গেছে এটা খুবই দুঃখজনক। এই বিয়ে গুলো নাও হতে পারতো যদি নিয়মিত স্কুল খোলা থাকতো।
যেদিন প্রথম স্কুল খুলে দেয় সেদিন জেলার ৯টি উপজেলায় ১০টি গার্লস স্কুলে অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি ২০৩ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।