দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট-গাইবান্ধা সড়কের একমাত্র বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকীর্ণ হওয়ায় আতঙ্কে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন এবং পথচারীরা।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় ২০০৬ সালে ব্রীজটি নির্মান কাজের উদ্বোধন করা হয়।কাজ শেষে ২০০৮ সালে মাঝামাঝি সময় ব্রীজটির শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মন্জু।
ঘোড়াঘাট-গাইবান্ধা সড়কের বেইলি ব্রিজটি দেখা যায়, দুই পাশের রাস্তা ১৬ ফিট প্রস্ত করে পিলার বসানো হয়েছে অথচ ব্রিজটির উপর যানবাহন চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে মাত্র ১২ ফিট।যা রাস্তার চেয়ে প্রায় ৪ ফিট ছোট। আর রাস্তার চেয়ে ছোট হওয়ার কারণে ব্রিজটিতে একটি বাস বা ট্রাক উঠলে ঐব্রিজ দিয়ে একটি বাইসাইকেল ও যেতে পারে না। যার কারণে সব সময় ব্রিজটির দু’পাশে লেগে থাকে অসহীন যানজট।
ব্রিজের প্লেটগুলোর বিট ক্ষয়ে গেছে। যার জন্য একটু কুয়াশা কিংবা বৃষ্টি হলে ঘটে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে দুই এবং তিন চাকার গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজিদের জন্য বিপদজনক।এই ব্রিজে দুর্ঘটনা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
১২ ফিটের ব্রিজটির তলদেশের পিলারগুলো তৈরি আছে ১৬ ফিটের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ব্রিজটি ১৬ ফিট প্রশস্ত করে তাহলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে।
দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের সকল যানবাহন ঘোড়াঘাটের এই ব্রিজ দিয়ে পলাশবাড়ী,গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় যাতায়াত করে থাকে।রাতে-দিনে প্রায় কয়েকশো বিভিন্ন প্রকার ভারি ওজনের ছোট-বড় যানবাহন এই রাস্তায় চলাফেরা করে।
তবে সকালে ব্রিজের পশ্চিম পাশে এবং বিকেলে তার পূর্ব পাশে, যানজট নিরসনে জন্য প্রায় তিন বছর যাবৎ স্বেচ্ছায় কাজ করে আসছে রুবেল নামে এক যুবক।
তিনি প্রতিটি গাড়ি পর্যায়ক্রমে পারাপারের নির্দেশনা দেয়। আর এই কাজে অনেকেই খুশি হয়ে তাকে কিছু টাকা দেন, আর তা দিয়ে চলে রুবেলের সংসার।
রুবেল আহমেদ বলেন, সেতুটি পুরাতন হয়ে গেছে, আবার দুই পাশ চওড়া না। ব্রিজটি বড় হলে গাড়ি-ঘোড়া ভাল ভাবে যেতে পারবে।
গাইবান্ধা জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন আমবাগান শাখার সাধারন সম্পাদক বুলেট বলেন, ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপর্ণ, যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ২০ থেকে ২২ বছর যাবৎ ব্রিজটি হওয়া পর্যন্ত দেখে আসছি, সবসম দুই পাশে যানজট লেগে থাকে। ব্রিজটি বড় করা দরকার।
ভ্যান চালক আশাদুল জানান প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ বার এই ব্রীজ দিয়ে পলাশবাড়ী ঘোড়াঘাট যাতায়াত করি।একবার জ্যামে পরলে দুই ঘন্টা পার হয়ে যায়।
বাস চালক আনোয়ার বলেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এই ব্রিজ দিয়ে গাইবান্ধা রংপুর টু দিনাজপুর জয়পুরহাট যেতে হয়। রাস্তা ভালো কিন্তু ব্রিজটির বেহাল দশা। খুব ছোট ব্রিজ গাড়ি নিয়ে উঠলে, দুই পাশ দিয়ে একটি বাইসাইকেল ও আসতে পারে। তাতে যানজট সৃষ্টি হয়।
ঘোড়াঘাট থেকে গাইবান্ধা গামী একটি বাস চালক নওশাদ হোসেন বলেন, দিনে তিনবার আসা-যাওয়া করতে হয় এই ব্রিজ দিয়ে। আমাদের সময়ের গাড়ি, সবদিকের রাস্তা ভাল, কিন্তু এই ব্রীজ পার হতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়।
একজন হাসপাতালের চাকরি জীবি নারী সানজিদা রহমান বলেন, প্রতিদিন সকালে স্বামীর মোটরসাইকেলে চড়ে গাইবান্ধা হাসপাতালে যাওয়া-আসা করি। এই ব্রিজটি পার হতে খুব ভয় লাগে। ব্রিজটি দুপাশ ছোট এবং পুরাতন হয়ে গেছে। বেইলি ব্রিজটির কোন বিট নেই, গাড়ির চাকা পিছলে যায়। কখন যে কি হয়?
ঘোড়াঘাট প্রেসক্লাবের আহবায়ক আনভীল বাপ্পি বলেন ব্রীজটি ভেঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় ব্রীজ নির্মান হলে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে।
এবিষয়ে গাইবান্ধার সড়ক ও জনপদ বিভাগ দাবী করেন ঘোড়াঘাট বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকীর্ণ। আমরা ইতিমধ্যে ব্রিজটির উপরের অংশ ভেঙে নতুন করে তৈরির এবং বড় করার অনুমতি প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে বেইলি ব্রিজটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা ০৩ পলাশবাড়ী সাদুল্লাপুর আসনের এমপি এ্যাডঃ উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি বলেন ব্রীজটি পুনঃ নির্মান করনের জন্য মহান সংসদে উত্থাপন করেছি।পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ডিও লেটার প্রেরন করেছি ।খুব শীঘ্রই ব্রীজটি নির্মান কাজ শুরু হবে।