অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। উক্ত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এস এম নজরুল ইসলামকে ৭৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সরদার জাকির হোসেন দ্বিতীয় বার তালা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম ও তার ছেলের গুন্ডা বাহিনী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার নৌকা প্রতিকের নেতা-কর্মীদের মারপিটসহ মিথ্যা ও হয়নারীমূলক মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছেন। শুধু মারপিট ও বাড়ী ছাড়া করে ক্ষ্যান্ত হয়নি, পরাজিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও তার গুন্ডা বাহিনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের ৪২ নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা ও হয়নারীমূলক মামলা দিয়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশী চালানোর নামে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।ইতিমধ্যে নৌকার দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নজরুল বাহিনীর তান্ডব ও পুলিশী হয়রানীতে নৌকা প্রতিকের নেতা-কর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পরও দলের শত শত নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি নৌকা প্রতিকের বিজয়ী চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যরা গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন এমন অভিযোগে গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে তালা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দীন বিশ^াস। তালা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দীন বিশ^াস স্বাক্ষরিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আওয়ামী লীগনেতা সৈয়দ ঈদ্রিস।
লিখিতি বক্তব্য জানাযায়, ২০ সেপ্টেম্বর তালা সদর ইউপি নির্বাচনে বর্তমান জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও তালা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৭৬২ ভোটের ব্যবধানে জযী হন। নির্বাচনের ২দিন পর সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আয়োজনে শাহাপুর বাজারে সরদার জাকির হোসেনের সংবর্ধনা শেষে বিজয় মিছিল চলছিলো। এ সময় লাঙ্গল প্রতিকের কর্মী আবুল হোসেন এসে বলে,‘ভোট কেটে পাশ করে আবার বিজয় মিছিল করছিস? এই কথা নিয়ে আবুল হোসেনের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ধাক্কা-ধাক্কি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাঙ্গল প্রতিকের পরাজিত প্রার্থী এস এম নজরুল ইসলাম শুরু করেন চক্রান্ত। প্রথমে আবুল হোসেনকে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি।
এরপর আবুল হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগমকে বাদী করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও তালা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমান, বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে যারা নৌকা প্রতিকের কঠোর সমর্থক বা কর্মী ছিলেন এমন ৪২ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনকে আসামী করে তালা থানায় একটি মামলা দায়ের করান লাঙ্গল প্রতিকের পরাজিত প্রর্থিী নজরুল ইসলাম। যার মামলা নং ১০, ২২/৯/২১ ইং। মামলা করার দিন বিকালে তালা উপ-শহরে লাঙ্গল কর্মী আবুল হোসেন মারা গেছে বলে অপ-প্রচার চালানো হয়। এরপরই পুলিশ তদন্ত না করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেফতারের নামে তল্লাশী শুরু করে। নৌকা প্রতিকের সমর্থক জিয়া নিকারী ও মোস্তফা শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ওই মামলা নথিভূক্ত করেন। বর্তমানে আবুল হোসেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে তার চিকিৎসক জানিয়েছেন আবুল হোসেন পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তার শরীরের তেমন কোনো সমস্যা নেই। অথচ ষড়যন্ত্রকারীদের রোষানলে পড়ে শত শত দলীয় নেতা-কর্মী আজ বাড়ি ছাড়া হয়ে পড়েছে বলে লিখিত বক্তব্য উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়,২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসএম নজরুল ইসলাম কালো টাকার জোরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি সাধারণ জনগণের উপর শুরু করেন নির্যাতন। তার হাতে গত ৫ বছরে শতাধিক নারী-পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরিষদের ভেতরে রাখা লাঠি দিয়ে তিনি নিজে তাদেরকে বেধরক মারপিট করতেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগিরা বিতর্কিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও তার বিচারের দাবীতে তালা উপ-শহরে একাধিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন। এছাড়া এস এম নজরুল ইসলাম তালা থানার তৎকালীন ওসি শাহ্ মশিউর রহমানের প্রকাশ্যে হাত কেটে নেয়ার ঘোষণাও দেন। শুধু তাই নয়, তালা থানার কয়েকজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে এসএম নজরুল ইসলাম। এসব ঘটনায় বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক মামলা, জিডি ও অভিযোগ করা হয় নজরুলের বিরুদ্ধে ।
এসএম নজরুল ইসলাম ও তার মাদকাসাক্ত পুত্র আকরামুল ইসলামের অত্যাচারে এলাকার শত শত মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে ৩৯টি মামলা ও জিডি রয়েছে। এতগুলো মামলা,জিডি ও অভিযোগ চলমান থাকার পরও এসএম নজরুল ইসলাম প্রভাব বিস্তার করে সে নিজেকে সব সময় আইনের উর্ধ্বে রাখতে সমর্থ হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা করে বহাল তবিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। তার খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নজরুল ইসলামের নিকট আত্মীয় চরমপন্থী ক্যাডার বনদস্যূ রাজু ওরফে আরশাফ আলীকে ব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করে চলেছে। বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছে ইয়াছিন সরদার নামের আরেক সন্ত্রাসী। সকলে মিলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে। আর ক্ষতাসীন দল আওয়ামী লীগে করে বিজয়ী হয়েও আজ দলের শত শত নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলা ও হামলার শিকার হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
দুর্নীতিবাজ হিসেবে নজরুল ইসলাম এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। বিভিন্ন হাসপাতালে খাদ্যের ঠিকাদারী করে অসহায় রোগিদের খাবারের টাকা মেরে কোটি কোটি কালো টাকার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি সে গ্রামের বাড়িতে প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে একটি বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন।
এক কথায় বলা যায় এসএম নজরুল ইসলাম একজন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ,ভূমিদস্যু এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে এলাকায় খ্যাত। সম্মেলনের মাধ্যমে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে তদন্তপূর্বক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানানো হয়।এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি, নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিল