কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননার ঘটনায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় ৭টি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার গুনাইগাছ, থেতরাই ও হাতিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় উলিপুর মসজিদুল হুদা থেকে একদল বিক্ষুব্ধ মুসল্লি শহরের প্রধান সড়কে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে একদল উৎসুক জনতা ফের শহরের মূল পয়েন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্ষোভ করেন। পরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন উৎসুক জনতা।
পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মণপাড়া দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত জীবন কৃষ্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ মানুষ এসে মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে প্রতিমাসহ সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।’
হোকডাঙা ভারতপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কমলেন্দু রায় জানান, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে একদল লোক এসে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়াও পাশের বাড়িতে হামলা করে তারা।
নেফরা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিপেন রায় বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ লোক এসে মন্দিরের গ্রিল টিন, প্রতিমা ও পাশের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়।’
এ ছাড়াও পশ্চিম কালুডাঙ্গা সর্বজনীন দুর্গা মন্দির, থেতরাই ফাসিদাহ বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, হাতিয়া পুরাতন অনন্তপুর বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, হাতিয়া ভবেশ নমঃদাস পাড়া দুর্গা সর্বজনীন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। বুধবার রাত থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ২ প্লাটুন বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ওয়ালিদ হোসেন, পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকারসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।’