ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয় নদের পানি। প্রথমবারের দেখায় আঁতকে উঠতে পারেন যে কেউ। যে জলধারার পানি দিয়ে হতো কৃষিকাজ, খাওয়ানো হতো গবাদি পশুকে, সেই পানি এখন স্থানীয়দের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক। রঙিন এ পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। রোগাক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু-পাখি, হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। অস্বাভাবিক মনে হলেও এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় বয়ে যাওয়া বানার নদে। এ নদ গিয়ে মিশেছে ঐ উপজেলার খিরু নদীতে। আর খিরু নদীর প্রবাহ গিয়েছে শীতলক্ষ্যায়।
আক্ষেপের সুরে ত্রিশালের আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের নারায়ণপুরের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, এ নদের তীরেই আমার জন্ম, বড় হওয়া। আমরা এক সময় এখানে গরু-বাছুর গোসল করিয়েছি, নিজেরাও গোসল করেছি। নদের পাশে নানা ফসলের আবাদ করেছি। কিন্তু পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কোনো ফসলই এখন হয় না। শাহাবুদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, গরু-ছাগল, হাঁস নদীর পাড়ে যেতে চায় না। নদীতে নামলেই হাঁস মরে যায়। আগে নদীর দুইপাশ দিয়ে বীজতলা করতাম। এখন আমাদের কিছুই করার নেই।
বানার নদে কেন বিভিন্ন রঙের পানি প্রবাহিত হয় তা জানা গেল মাইল পাঁচেক দূরের চৌহার খালে। দুইদিক থেকে দুই রঙের পানি এসে মিশছে এ খালে। একদিক থেকে আসছে সাদা পানি, অন্যদিক দিয়ে আসছে নীল পানি। যা মিশছে বানার নদে। আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে, চৌহার খালের ওপর রয়েছে আকিজ সিরামিক কোম্পানির স্থাপনা। এর পশ্চিমে ১০-১৫ একরের বাতাইন্না বিল। বাতাইন্না বিল ও সরদান বিলের পানি নিষ্কাশন হয় চৌহার খাল দিয়ে। আকিজ সিরামিক ও তার পূর্বপাশের আর.কে ব্রিকসের বড় বড় আরসিসি পাইপলাইনে কারখানাগুলো থেকে তরল বর্জ্য এসে মিশছে খালের পানিতে।
চৌহার খালের পাশ দিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলে গুজিয়াম-আমিরাবাড়ি সড়কে পাওয়া যায় একটি কালভার্ট। যার নিচে একটি সুরঙ্গ দিয়ে অবিরাম বের হচ্ছে রঙিন পানি, উঠছে ধোঁয়া। বিষাক্ত সেই পানিই খাল দিয়ে যাচ্ছে নদীতে। সুরঙ্গটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ড্রেসডেন টেক্সটাইলস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির। ড্রেসডেন টেক্সটাইলস লিমিটেডের এজিএম নুরে আলম খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান। পরে তাদের ইটিপি প্লান্ট বা শোধনাগার সচল রয়েছে কিনা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিতে ইটিপি স্থাপনের কাজ শেষ হয়নি। শিগগিরই এটি চালু করা হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, শোধনাগার চালু না থাকায় এর আগে কারখানাটি বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমার জানামতে প্রতিষ্ঠানের এসব পানি নিষ্কাসন বন্ধ রয়েছে। তবে যেহেতু তারা আমাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে- দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং তাদের বড় ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।