হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। তবে কোনমতে আওয়ামী লীগের মান বাঁচিয়েছেন নৌকার চার ইউপি চেয়ারম্যান। তবে নৌকার এমন ভরাডুবি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজনীতির মাঠে থাকা নেতা ও দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জনবিচ্ছিন্নদের দলীয় প্রতীক দেয়ার কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
নবীগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়েছে রোববার। সকাল ৮ টা থেকে বিরতিহীনভাবে একযোগে ৪ পর্যন্ত চলে এই ভোটগ্রহণ। ১৩ টি ইউনিয়ন হচ্ছে- বড় ভাকৈর (পশ্চিম), বড় ভাকৈর (পূর্ব), ইনাতগঞ্জ, দীঘলবাক, আউশকান্দি, কুর্শি, করগাঁও, নবীগঞ্জ সদর, বাউসা, দেবপাড়া, গজনাইপুর, কালিয়ার ভাঙ্গা ও পানিউমদা।
এর মধ্যে ১নং বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রঙ্গলাল দাশ ঘোড়া প্রতীকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকার প্রার্থী সমর দাশ।
২নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্তার হোসেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেহের আলী মালদার।
৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে আওয়ামী লীগ। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নোমান হোসেন ৬১০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার এসএম আব্দুস সবুর পেয়েছেন মাত্র ৪১৭ ভোট। এছাড়া বিদ্রোহী আলাউদ্দিন ২২০৯ এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সামাউল ইসলাম ৩৯৮ ভোট পেয়েছেন।
৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল ছালিক আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রার্থী আবু সাঈদ এওলা।
৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মোফাজ্জল হক।
৬নং কুর্শি ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ খালেদুর রহমান চৌধুরী আনারস প্রতীকে জয়লাভ করেছেন। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মুকিত।
৭নং করগাঁও ইউনয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিমললেন্দু দাশ রানা ঘোড়া প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছাইম উদ্দিন।
৮নং সদর ইউনিয়নে নৌকার হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জাবেদুল ইসলাম চৌধুরী সাজু।
৯নং বাউসা ইউনয়নে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিকুল ইসলাম শিশু আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীআওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী।
১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে সতন্ত্র প্রার্থী শাহরিয়াজ নাদির সুমন চশমা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী আব্দুল মোহিত চৌধুরী।
১১নং গজনাইপুর ইউনয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুর রহমান মুকুল আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিউল আলম।
১২ নং কালিয়ার ভাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী আনারস প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইজাজুর রহমান নৌকা প্রতিকে জয়লাভ করেছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল হাসান মামুন।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪ জন, আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী ৪ জন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ৩ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের দলের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। ভোটের ফলাফল নিয়ে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে অনেক নেতা মনে করেন।
যদিও দলের মধ্যে থেকে অনেকে নির্বাচনে অসহযোগিতা করেছেন বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গতি গোবিন্দ দাশ।