সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। ১৬টি নদ-নদী বেষ্ঠিত এ জেলায় রয়েছে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল।বন্যা খরা ও নদী ভাঙ্গনসহ নানান প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।বন্যার থাবা থেকে ঘুরে দাড়াতে না দাড়াতে শীত এসে পড়ছে ঘরের দুয়ারে।
গত কয়েকদিন ধরে প্রবাহমান হিমেল হাওয়া, কনকনে ঠান্ডার পর শুরু হয়েছে শৈত্য প্রবাহ।শহর বন্দর গ্রাম ঢেকেছে কুয়াশার চাদরে।এই শীতে জেলার খেটে খাওয়া মানুষজনের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।সপ্তাহজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এতে করে ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী পরিবারগুলো পড়েছে চরম বিপাকে।গরম কাপড়ের অভাবে শিশু বৃদ্ধ বয়সী নারী পুরুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।জ্বর,সর্দি,কাশির সাথে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়,বর্তমানে চিকিৎসা নেয়া মোট রোগীর প্রায় ৯৭ শতাংশ রোগী হচ্ছে শিশু রোগী।ঠান্ডা জনিত রোগে ভর্ত্তি হওয়া ৬৫ জন রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৬৩জন।হাসপাতালের শয্যা সংকটে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন এসব রোগীরা।এদের মধ্যে গ্রাম থেকে আসা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।শীতের তীব্রতা বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক শিশুর মা মোছাঃ আলপনা বেগম জানান, গত ৪ দিন ধরে আমার সন্তান অসুস্থ। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করে সুস্থ্য না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে ভীড় দেখে দুঃশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। তবে সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন তিনি।
কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আসমা খাতুন জানান, গত তিনদিন ধরে ঠান্ডাজনিত কারনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। ১২ বেডের এই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গত পরশু (সোমবার) ২২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। গতকাল(মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৬ শিশুসহ নতুন ২০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এবং আজ (বুধবার)সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত মোট ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন রোগী। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৭ জন।বর্তমানে ওয়ার্ডে ৬৩ জন শিশুসহ রোগী সংখ্যা বেড়ে ৬৫ জন রয়েছে।
শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ আল আমিন মাসুদ জানান,গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে অনেকেই শিশুদের ঘন স্যালাইন খাওয়ান। এটা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্যালাইন গোলানোর ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিতে আধা লিটার পানিতে পুরো স্যালাইন গুলিয়ে সঠিক নিয়মে শিশুদের খাওয়াতে হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন,শীত এলেই শিশুরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। এখন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। এ অবস্থায় শিশুদের বাইরের খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেজন্য শীতের মধ্যে শিশুদের বাইরে বের করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে।