November 23, 2024, 5:50 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

অর্থের অভাবে থেমে যাচ্ছে লেগস্পিনার সিয়ামের স্বপ্ন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
  • 239 দেখুন

বাবার অনুপ্রেরণায় পথচলা লেগ স্পিনার খ্যাত এক কিশোর নাম সিয়াম।এলাকায় ক্রিকেট খেলার অদম্য দক্ষতায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।স্থানীয় ক্রিকেটারদের কাছে সিয়াম যেন এক আতংকের নাম।দূর্দান্ত বলিং আয়ত্ব করা লাইন ও লেন্থে নজর কাড়া বলের টার্নিংসহ নানান কৌশল শুধু খেলোয়ারদের ভয়ের কারন নয়,অনান্য বিপক্ষ দলের অধঃপতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই লেগ স্পিনার সিয়াম।তার খেলার কারিশমা দেখে বিভিন্ন পাড়া কিংবা ক্রিকেট টূর্নামেন্ট থেকে খেলার ডাক আসে লেগ স্পিনার সিয়ামের।

মাত্র ৫ বছরে সিয়ামের পুরোদস্ত লেগ স্পিনার হওয়ার গল্পটা যতটা আনন্দের খবর,তার চেয়ে বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো এই স্বপ্নে ঘোর বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামিউল ইসলাম সিয়ামের বাবা একজন প্রাইভেট শিক্ষক, ছিলেন ফুটবলপ্রেমী।কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন গোপালেরপুর গ্রামের বাসিন্দা।অভাবের সংসারে তিনিও বেশিদুর এগুতো পারেন নি। নিজে কিছু করতে না পারলেও ছেলেকে ফুটবলার না হোক ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন বুনতেন তিনি। ১ম শ্রেনি হতে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে চলে তার সংসার।চার সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি তিনি।স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দুঃখ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করলেও চোখে মুখে তার আকাশ সমান স্বপ্ন।সন্তানদের শিক্ষা-দ্বীক্ষায় আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ার অদম্য ইচ্ছে কুড়ে খাচ্ছে তার অনুভূতিকে।নিজের ইচ্ছের কবর দিলেও লেগ স্পিনার সিয়ামের স্বপ্ন অর্থের অভাবে ধূলিসাৎ হবে এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না খেলাপ্রেমী দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলু মিয়া।অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতায় ছেলেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে না পারলেও হৃদয় জুড়ে উদ্দীপনা উৎসাহ প্রেরণা ছিল সিয়ামের অন্যতম পাথেয়।শুধু ছেলের জন্য একটু সহযোগিতার আশায় দিন কাটছে দেলোয়ারের।

সরেজমিনে ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মাঠেই অনুশীলন করতে দেখাযায় সিয়ামকে। সেখানে সবুজ ঘাসের মাঠে বোলিং করছে সিয়াম। অপর প্রান্তে ব্যাট করছে একজন ব্যাটার। ডানহাতের কাঁধ বাকিয়ে লেগ স্পিনার কব্জির মোচড় দিয়ে বল করে। অপরিপক্ক পিচে বলের টার্ন দেখলে চোখ ফেরানো মুশকিল। বল লেগের দিক থেকে অফের দিকে ঘুরে যায় অনায়সে। বেশিরভাগ সময়েই বল পিচে পড়ার পর ঘুরে অফ সাইডে আবার স্টাম্পে উপড়ে ফেলছে। লেগ স্পিনার হিসেবে লেগ ব্রেক বল করে,লাইন এবং দৈর্ঘ্য এবং বলের টপস্পিন বনাম সাইড স্পিনের পরিমাণে সামঞ্জস্য ঘটাতে পারে।

সিয়াম বলেন,আমি ৭বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলি। ইউটিবে শেনওয়ার্ন,রাশিদ খানের বোলিং স্পিড দেখে লেগ স্পিনার হবার আমার ইচ্ছে জাগে,চেষ্টা শুরু করি।

অজপাড়া গায়ে আমার বাড়ি।বাবার অভাবের সংসার,আমাদের এ উপজেলায় ক্রিকেটের কোন পিচ নেই।এখান থেকে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম প্রায় ৪০ কিঃমিঃ দূরে।সেখানে প্রশিক্ষন নেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও শহরে মেস,হোস্টেলে থাকার মত কোন অবলম্বন নাই।

আমার বিশ্বাস ক্রিকেট কোচের কাছে প্রশিক্ষন পেলে আমার খেলার হাত আরো ভালো হবে।আমি স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলবো এবং বিশ্বকাপ জেতাবো।কিন্তু অভাবের কারনে কতদূর যেতে পারবো তা একমাত্র আল্লাহ জানে।

সিয়াম ভরাক্রান্ত মনে বলেন, আমি ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। লেগ স্পিনার হবার সুবাদে এলাকায় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলি। জেলা বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব-১৪ এ সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম এসে খেলতে পারি নি।তবে বড় ভাইয়কে সাথে নিয়ে লালমনির হাট,ঠাকুরগাঁওয়ে সুনামের সাথে খেলতে পেরেছি।

সিয়ামের বাবার সাথে কথা বলে জানা যায়,পরিবারে সন্তানের দের মধ্যে সিয়ামের অবস্থান মেঝো।বড় ছেলে সদ্য এসএসসি পাস করছে।সব ছোট ছেলে প্রাইমারিতে পড়ে।ছোটবেলা থেকে সিয়ামের ছিল ক্রিকেটের প্রতি অন্য রকম টান।ক্রিকেট বল না থাকায় গাছের পেয়ারা,গাছের সুপারি দিয়ে বাড়ি উঠানে একা একা বলিং করতো।ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে কষ্ট হলেও মাঝে মধ্যে ব্যাট আর রাবার ডিউজ বল এনে দিতাম।ও তাই দিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলত।কিন্তু আমি জানতাম না সে লেগ স্পিনার কৌশল এভাবে আয়ত্ব করবে।সেদিন সোহাগ নামে এক ভাই ওর খেলা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।সেদিনই জানতে পারি সে লেগ স্পিনারের প্রয়োজনিয় কৌশল বেশ রপ্ত করেছে।

তিনি আরো বলেন, সিয়ামের লেখাপড়ার প্রতি আমি যথেষ্ট কেয়ার নেই। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি তার খেলাটাকেও প্রধান্য দেই।কেননা খেলায় সুনাম অর্জন করুক,দেশের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করুক এটা মনে প্রাণে চাই।তবে একটাই দূর্ভাগ্য অর্থের অভাবে যেন ছেলেটার স্বপ্ন ডুবে না যায়।লেগ স্পিনার সিয়ামের জন্য সরকারি-বেসরকারির পৃষ্ঠপোষকতা বিভিন্ন সংগঠন,প্রতিষ্ঠানসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছেন বলে জানা তিনি।

খেলার সহকর্মী রাফিক বলেন,সিয়াম লেগ স্পিনার হিসেবে খুব ভালো বোলিং করে। ওর বল খেলতে বেশ বেগ পেতে হয়। স্বাভাবিকভাবে খেলতে ব্যাটারদের সমস্যায় পড়তে হয়। সিয়াম একজন ভালো কোচের অধিনে প্রশিক্ষণ নিলে অনেক বড় একজন লেগ স্পিনার হতে পারবে।

কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার কোচ বিজন কুমার দাস বলেন,সিয়ামের বোলিং এ্যাকশন দেখে বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব-১৪ এ নেই।সিয়াম গ্রামের ছেলে একজন খেলোয়াড় হিসেবে স্মার্টনেস,বোলিং কৌশলে ওর কিছুটা দুর্বলতা আছে। তবে সিয়ামকে ভালো প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে দেশের লেগ স্পিনারের ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।

কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান লোবান বলেন,সিয়ামের বিষয়টি আমি সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রশিক্ষন নিতে জেলা শহরে নিয়মিত আসতে পারেনি। আমার পক্ষ থেকে সিয়ামের থাকার ব্যবস্থা,খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো। কিন্তু সিয়ামের যাতায়াত,খাওয়া ইত্যাদি কিছু বিষয় আছে এক্ষেত্রে তার সহযোগিতা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102