ভারতে মাত্র ৩৫ টাকায় ফেনসিডিল কেনা যায়। সেই বোতল ৭০ ট্যাক্স নিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও ব্যবসা হবে, রাজস্ব বাড়বে সরকারের। তাই ফেনসিডিল আমদানি করে রাজস্ব বাড়াতে বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভাইরাল হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল ইসলাম প্রধান।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা আয়োজিত ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি নিজেও এক বোতল ফেনসিডিল খেয়েছেন উল্লেখ করে ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ফেনসিডিল খেলে ঘুম ছাড়া আর কিছুই হয় না।
জেলা পুলিশ সুপারের সামনে ফেনসিডিল খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ননা করার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বেশ সমালোচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল ইসলাম প্রধান।
আজিজুল ইসলাম প্রধান লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক ও সরপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আজিজুল ইসলামকে বলতে দেখা যায়, ‘সত্য বলব, তাতে জেল-ফাঁসি যা হয় হোক। ভারতে ফেনসিডিল মাত্র ৩৫ টাকা। এ ফেনসিডিলের জন্য দৈনিক হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। আমার তিন ছেলে মাস্টার্স পাস করেছে। তাদেরকে নিষেধ করলেও শোনে না। গোপন জিনিসের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে তারা ফেনসিডিল খাচ্ছে। ভারতে গিয়ে আমি নিজেও এক বোতল ফেনসিডিল খেয়েছি, ঘুম ছাড়া কিছু হয় না। এ ছাড়া ভারতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশের তুস্কা সিরাপের মতোই ফেনসিডিল। যা খেলে ঘুম ছাড়া আর কিছু হয় না।’
বিডিওতে তিনি আরও বলেন, বিষয়টা বঙ্গবন্ধু কন্যার নজরে আনা যায় কি না? ভারত থেকে ৩৫ টাকায় ফেনসিডিল কিনে ৭০ টাকা ট্যাক্স নিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও ব্যবসা হবে, রাজস্ব বাড়বে সরকারের। তাই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে আলোচনা করা দরকার বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
তার এমন বক্তব্য পুরো অনুষ্ঠানে সবাই অট্ট হাসিতে ফেটে পড়েন। এ সময় কৌশলে তার বক্তব্য থামিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম। এমন বক্তব্যে হতভম্ব হয়ে পড়েন খোদ প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা।
আমদানি নিষিদ্ধ এবং যুব সমাজ ধ্বংসকারী ফেনসিডিল আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা আওয়ামী লীগ নেতার এ বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যে ফেনসিডিল তথা মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বারবার প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই সরকারের তৃনমূলের এক নেতা ফেনসিডিল আমাদানিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশাসনের সামনে ফেনসিডিল খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক ও সরপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান মুঠোফোনে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কথাগুলো ওইভাবে বলিনি। দেশ হাজার হাজার-কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে বলেছি।
‘এ বিষয় জানতে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে সাবেক চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ করেছেন আদিতমারি থানার ওসি। কেননা সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তার। ওই থানার কাউসার নামে একজন এসআই আছে, তিনিও ঘুষখোর। গরিব মানুষকে জিম্মি করে হয়রানি করছে। এসবের প্রতিবাদ করায় ওসির সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ। আমাকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান এ রকম একটি বক্তব্য রাখবেন সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীসহ তার জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’