কথিত সাংবাদিক স্বাধীন আবার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার
________________________________________
হাবিব সরকার ওরফে স্বাধীন। নামের মতোই তিনি মাদক ব্যবসায় অবারিত স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। এই স্বাধীন এক সময় বনানীতে চা বিক্রি করতেন। কিন্তু এই পেশা বাদ দিয়েছেন অনেক আগেই। পেশা বদলে তিনি এখন মাদক কারবারিতে জড়িয়েছেন, পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেন।
পুলিশের ভাষ্য স্বাধীনের বিরুদ্ধে একাধিক জিডি ও মাদক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার নামে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ রাজধানীর মহাখালী, কড়াইল, সাততলা এলাকায় স্বাধীন মাদকের কারবার করেন।
গত ১০-০৪-২০২২ইং খিলক্ষেত থানার এসআই সজিব ও তার টিম বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ স্বাধীনকে গ্রেপ্তার করে। পরে মাদক মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতের নির্দেশে স্বাধীনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এর পূর্বে ০৯-২০১৯ইং ৬৮ পিস ইয়াবাসহ কড়াইলের স্থানীয় কাউন্সিলের অফিসের সামনে থেকে স্বাধীনকে গ্রেফতার করেছিল বনানী থানার তখনকার এস আই সুজন সাহা ও এ এস আই ইমরানের টিম । মামলা নং ৪১। মাদক মামলায় বনানী থানায় গ্রেফতারের পরে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে বনানী থানার সাবেক ওসি বর্তমানে বিমান বন্দর থানার (ওসি) বি এম ফরমান আলীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে স্বাধীন। একই অপপ্রচার চালান এসআই সুজন সাহা ও এএসআই ইমরানের বিরুদ্ধেও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাবিব সরকার স্বাধীন একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার সঙ্গে ডিএনসিসি ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আলামিনের ভাই ট্যারা খোকনের সঙ্গে দোস্তি রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদ পাড়ার সায়েদুল, আকাশ, সজীব, পিংকু, মামুন, শাকিল, ময়না, কড়াইলের তাসলি, জামান এদের সঙ্গে মাদক কারবার সূত্রে স্বাধীনের সম্পর্ক রয়েছে।
উল্লেখ্য, ট্যারা খোকন গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিলে ইয়াবাসহ ধরা পড়েন। এ পর্যন্ত স্বাধীনের সহযোগী এই ট্যারা খোকন অন্তত ২০ বার ধরা পড়েছেন। যার অধিকাংশ মাদকের মামলা।
গুলশান-বনানী-তেঁজগাও এ সব এলাকায় মাদকের কারবার করেন ট্যারা খোকন। অনেক সময় প্রেস স্টিকার লেখা স্বাধীনের মোটরসাইকেল এই ট্যারা খোকন ইয়াবা বহনের কাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নারীঘটিত কেলেঙ্কোরি রয়েছে স্বাধীনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নারী জানান, “আমি কড়াইলে থাকি। মহাখালী ওয়্যারলেস গেট মোড় স্বাধীন আমাকে ডেকে কুপ্রস্তাব দেয়। সে আমাকে খারাপ কাজ করার প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি মাসে আমার কাছে দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।” এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আদালত থেকে জামিন নেয় স্বাধীন।
অভিযোগ রয়েছে, নিজের মাদকের ব্যবসা সহজ করার জন্য টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার কার্ড করেছেন এই হাবিব সরকার স্বাধীন। তিনি নিজেকে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক পরিচয় দেন। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক এস এম মোরশেদ।
প্রমান পাওয়া যায়, সাংবাদিক দাবি করা এই হাবিব সরকার স্বাধীন একজন কপি পেস্ট সাংবাদিক। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত চার-পাঁচ বছরের পুরোনো প্রতিবেদন হুবুহু কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেন বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়। অন্যের লেখায় শুধু নাম, স্থান, দিন, ক্ষন পরিবর্তন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি। সৃজনশীল কিছু লেখার যোগ্যতা তার নেই।
অভিযোগ রয়েছে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজিও করেন স্বাধীন। কড়াইলের শ্রমিক লীগ নেতা দেলোয়ারের কাছ থেকে তিনি এককালীন ১০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। দেলোয়ার বলেন, “এককালীন ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়ার পাশাপাশি মাসে আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্বাধীন আমার নামে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়েছে।”
স্বাধীনের বিরুদ্ধে চাঁদার অভিযোগ করেন মহাখালী সাততলার অটো শ্রমিক ও শ্রমিক লীগ নেতা শামীম। তিনি বলেন, “আমার কাছ থেকে প্রতিমাসে দুই হাজার করে চাঁদা চেয়েছিল স্বাধীন। আমি দিতে রাজি না হওয়ায় সে আমার নামেও নিউজ করে অপপ্রচার করেছে।”
স্বাধীনের বিষয়ে ডিএনসিসি ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসিরের প্রতিনিধি আতর আলী বলেন, “আমাদের এই এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রয়েছে। আমরা মাদক নির্মূল করতে চায়। স্বাধীনের মাদক ব্যবসা থামাতে গিয়ে আমরাও আজ তার চক্রান্তে মাদক ব্যবসায় পরিণত হয়েছি। আমরা নাকি মাদক ব্যবসা করি? জনগণের মারধরের ভয়ে স্বাধীন তো এই এলাকায় থাকতে পারে না।”
বনানী থানা তাঁতী লীগের সভাপতি মমিন সরকার বলেন, "স্বাধীন আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। আমি না দিলে আমার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে।"
তিনি বলেন, "সত্য কখনো গোপন থাকে না আশা করি এই ভুয়া সাংবাদিক এর মুখোশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুলে দিবেন।"