গাজীপুরে একটি খামারের গরুর দুধ চুরির টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক কর্মচারীকে হত্যা করেছেন ওই ফার্মের অপর কর্মচারীরা। হত্যার পর ঘটনাটি পানিতে ডুবে মৃত্যু বলে প্রচার করেন অভিযুক্তরা। পরে ময়নাতদন্তে নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্নের বিষয়টি উঠে আসায় হত্যা মামলা করেন বাবা। দীর্ঘ তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিহত ফার্ম কর্মচারীর নাম রিয়াজ উদ্দিন (৩৫)। তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার জামালপুর হাজীপাড়া এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি জেলার ফুলদি এলাকার ছাইফ অ্যাগ্রোফার্মের রাখাল হিসেবে কাজ করতেন।
গ্রেফতাররা হলেন- নরসিংদী সদরের দক্ষিণ পুরানপাড়া এলাকার মো. ফাউজ উদ্দিনের ছেলে মো. আজিজুল হক (২০), একই এলাকার মো. হিরু মিয়ার ছেলে ইয়াছিন (৩৯) ও নরসিংদী শিবপুরের সৈয়দনগর এলাকার মো. সফিকুল ইসলামের ছেলে মো. আবির (১৬)।
jagonews24রিয়াজ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আসামিরা
গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, নিহত রিয়াজ উদ্দিনের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার জামালপুরে। সে পাশের ফুলদি এলাকায় ছাইফ অ্যাগ্রোফার্মে রাখাল হিসেবে কাজ করতো। ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন মিয়াসহ অপর আসামিদের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তারাও একই ফার্মে রাখাল হিসেবে কাজ করতো। আসামি ইয়াসিন মিয়া ওই ফার্মের দুধ বিক্রিসহ যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করতে। দুধ বিক্রি থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা আসামি ইয়াসিন চুরি করতো। রিয়াজ উদ্দিন বিষয়টি জানতে পেরে মালিকপক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে অপর তিন কর্মচারী মিলে রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন ২০২০ সালের ২৮ জুন বিকেল ৪টার দিকে রিয়াজ উদ্দিনকে সুকৌশলে ফার্ম সংলগ্ন বিলের মধ্যে থেকে হাঁস আনার জন্য নিয়ে যায় আসামিরা। সে বিলে সাঁতার দিয়ে দুইশো গজের মতো যাওয়ার পর ইয়াসিন তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে রিয়াজের মাথায় ৩/৪টি আঘাত করে। এতে রিয়াজ পানিতে ডুবে যায়। তখন ইয়াসিন ফার্ম সংলগ্ন বিলের পাড়ে দাঁড়ানো তার সহযোগীদের কাছে ফিরে এসে রিয়াজ পানিতে ডুবে গেছে বলে প্রচার করে। ইয়াসিন ফার্মে ফিরে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডসহ অন্যদের ডেকে এনে রিয়াজকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ সুপার মাকছুদের বলেন, মূলত প্রতিদিন দুধ বিক্রি থেকে টাকা চুরির বিষয়টি জানতে পেরে ওই টাকার ভাগ চাওয়ায় রিয়াজকে খুন করে পানিতে ডুবে সে মারা গেছে বলে প্রচার করে হত্যাকারীরা।
তিনি আরও বলেন, আসামি ইয়াছিন মিয়া, মো. আজিজুল হক ও আবিরকে সোমবার রাতে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার গাজীপুর আদালতে পাঠানো হলে আসামিরা নিজেদের রিয়াজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মো