টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে জেলার রৌমারী উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবি মানুষ।এসব গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা ও ভেলা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সুত্রমতে,শুধু রৌমারী উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১০৭ হেক্টর জমির ধান,পাট ও শাকসবজি।পানির স্থায়িত্ব যদি ৫দিনের বেশি থাকে তাহলে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রৌমারীর চার ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে যাদুরচর ইউনিয়নের ঝাউবাড়ী, গুচ্ছ গ্রাম, বকবান্দা নামাপাড়া, বকবান্দা ব্যাপারী পাড়া, চর লালকুড়া, মধ্য লালকুড়া, উত্তর লালকুড়া, অালগার চর, উত্তর আলগার চর, বিক্রি বিল, লাটিয়াল ডাঙ্গা, পাহাড়তলী, তিন ঘড়ি পাড়া, পুরাতন যাদুর চর, যাদুরচর পূর্ব পাড়া, শ্রীফলগতি।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইরগ্রাম, দুবলাবাড়ী, রতনপুর, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চুলিয়ারচর, উত্তর বারবান্দা, ইজলামারী, ফুলবাড়ি, ভুন্দুরচর, নয়ারচর, গোয়ালগ্রাম, চান্দারচর, খাটিয়ামারী, মাদারটিলা, পূর্বইজলামারী, কড়াইকান্দি ও ঠনঠনিপাড়া,চর শৌলমারী ইউনিয়নের ডিগ্রির চর, নামাজের চর, শান্তির চর, ঘুঘুমারী চর, মিয়ার চর, সুখের বাতি পাড়ের চর, সোনা পুর, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর গয়টা পাড়া, কাউনিয়া চর, আমবাড়ি, মাদাইডাঙ্গা, ঝগড়ার চর, ধর্মপুর , কাউয়ার চর, টাপুর চর হাজির হাট এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
রৌমারীর পুরাতন যাদুরচর ও চর লালকুড়া, খেওয়ারচর ও পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টিতে পানি উঠেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান, পাটের ফসলি জমিসহ শাকসবিজর বাগান।
কাশিয়াবাড়ি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেড় বিঘা জমির ধান কাটতে পারলেও ভারত থেকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে তাঁর এক বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে তাঁর ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিদ্যালয়ে ও বাড়ির চারপাশে পানি উঠায় নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছেন না তাঁরা। এতে পড়াশুনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও রৌমারী উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে পানি উঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান।
চর নলকুড়া গ্রামের বাসিন্দা মইনুল বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামায় এলাকার সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।
কৃষক রতন মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ বন্যার পানি আইসা জমিতে রাখা সব খড় ভাসাইয়া নিয়া গেছে। এখন গরুরে খাওয়ামো কি এ চিন্তায় আছি।’
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, বন্যার পানিতে যাদুরচর ইউনিয়নের ২০০ বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এ ইউনিযনের ১২ গ্রামের ১৭ হাজার মানুষ। ভেলা আর নৌকায় পারপার হতে এসব গ্রামের মানুষকে। শনিবার (১১জুন) রৌমারী ইউএনওকে সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখানো হয়েছে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত ত্রাণ সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
দাঁতভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, 'অামার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব গ্রামের ইরিধান ও পাট ক্ষেতসহ অসংখ্য মৌসুমী ফসলি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।'
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বন্যার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।ইতিমধ্যে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর মানুষের জান মালের নিরাপত্তা জন্য উঁচু স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১০৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে আউশ ধান ৪৮ হেক্টর, পাট ৪২, শাকসবজি ১২ ও ৫হেক্টর তিল তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি এ পানি ৫ দিন স্থায়ী হলে ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ২১টি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৩টি বিদ্যালয় যাদুরচর ইউনিয়নের। পানিবন্দি এলাকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না আসলেও কোনো সমস্যা নেই বলেও জানান তিনি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশারাফুল আলম রাসেল বলেন, সরেজমিন বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্যার্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। অাপাতত ফান্ডে যা অাছে তা থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা গুলি মেরামতে কাজ চলছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অারও চাহিদার অাবেদন দেয়া হয়েছে।