কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ঘর-বাড়িতে পানি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ। কিছু পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবার এখনও বসবাস করছেন নৌকায় ও ঘরের উঁচু করা মাচানে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে পড়েছেন তারা।
এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ২শ ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বিভাগ।
বন্যার্তদের জন্য সরকারী ও বে-সরকারীভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকলেও সবার ভাগ্যে জুটছে না তা।
বুধবার (২২ জুন) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস জানায়, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্ট ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৯ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতোলা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ ৪-৫ দিন থেকে পানি বন্দী জীবন যাবন করছি। বাড়ি থেকে বাহির হতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সহায়তা পাই নাই।খুব একটা কষ্টে আছি বলার মত ভাষা নাই।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়াই বাড়ি এলাকার মাহাবুব মিয়া বলেন, বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ ঠিকমত বাজার করতে পারছি না। খাওয়া দাওয়ার খুব সমস্যায় পরছি। আবার পানিতে চলাফেরা করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, সরকারি ভাবে আমার ইউনিয়নের জন্য চার টন চাল পেয়েছি তা আজ ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক বানভাসি মানুষকে দেয়া সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে বিদ্যালয় মাঠ ও তার আসেপাশে এলাকায় পানি উঠায় শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে মোট ২শ ৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কার্যক্রম বন্ধ রা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।