একদিন বাদে ঈদ।ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই হাজার হাজার টাকা খরচ করে।আর কেউ সার্বজনীন এই ঈদে হাসিমুখে সন্তানের মুখে এক ঠুকরো মাংস তুলে দিতে পারে না। অভাবনীয় দুঃখ আর কষ্টে ঈদের দিন কাটে তাদের।এমনি এক পরিবারের চিত্র দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নওয়ানি পাড়া এলাকার ভূমিহীন দিনমজুর শহর আলী (৫০) বাড়িতে।
দুই মাস থাকি বান (বন্যা) কাজ কামাই নাই। নিজের জায়গা জমিন নাই। মানষের (মানুষের) জায়গাত (জমিতে) বাড়ি করি আছি। বর্তমানে হামার বউ মানষের (মানুষের) বাড়িত কাজ করে তাহে দিয়া কোনরকম ভাবে চলছি। হাতোত কোন টেহা (টাকা) পয়সা নাই। ঈদোত যে এক পোয়া বয়লারের গোস্ত (মাংস) কিনমো তারও ব্যবস্থা নাই।
তিনি বলেন, কামাই (কর্ম) না থাকার কারণে হাতে টেহা (টাকা) নাই একটা যে গেঞ্জি কিনমো তাইও হবার নয়। তার পরে ফির ঘরটা ঠিকঠাক করতে কয়টা বাঁশের দরকার তারও উপায় নাই। টেহা (টাকা) নাই কিসের ঈদ হামার,দিন গেলেই হইবে।
[caption id="attachment_26796" align="alignnone" width="300"] বন্যা বিধস্ত শহর আলীর ঘর[/caption]
জানা গেছে, শহর আলীর নিজের কোন জমিজমা নেই। অন্যের এক শতক জমিতে একটি ঘর তুলে স্ত্রীসহ বসবাস করছেন। একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। গত দু-মাস ধরে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে থাকায় দিনমজুরের কাজ বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ দম্পতি। বর্তমানে তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে যেটুকু চাল পাচ্ছে তা দিয়েই চলছে অভাব অনটনের সংসার। বন্যার প্রভাবে শুধু শহর আলী নন তার মত শত শত দিনমজুর মানুষের মাঝে এবার ঈদের আনন্দ নেই বলে অনেকে জানিয়েছেন।
প্রতিবেশি লাভলী বেগম নামের এক নারী বলেন, শহর আলীর নিজের কোন জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। দিনমজুর কাজ করে তাদের সংসার চলে। বন্যার কারণে এখনো এখানকার জমিগুলোতে পানি। তাই কাজ করতে পারছে না। তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে তারা যে চাল দেয় তা দিয়েই সংসার চলছে আপাতত।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুর বলেন, বন্যায় এবার আমার ইউনিয়নে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবং অনেক বাড়ি ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ১শ বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে। সেই সাথে আমনের বীচতলা নষ্ট হওয়ার কারনে এখানকার কৃষকরা এখনো আবাদ করতে পারে নাই। এদিকে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ ১০ কেজি করে চাল ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন। এসব এলাকায় এখনো তীব্র সংকটে রয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও।
এদিকে সরকারী-বেসরকারী ভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকেরই।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় যাদের বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি যারা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। আমরা এই তালিকাটা নিরুপন করেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৪৯ ইউনিয়নের দরিদ্রদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছি তা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে