কল্যাণমূলক কাজ করে যেতে পারেন, সেজন্য দোয়া করা হয় খুতবায়। একইসঙ্গে সুন্দর আচরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে দুই বছর পর সীমিত পরিসরে আদায়ের পর এবার বৃহৎ পরিসরে পালিত হলো পবিত্র হজ। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে শুক্রবার সারা বিশ্ব থেকে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন। কণ্ঠে ছিল সেই আকুল ধ্বনি- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)। সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ধ্বনিতে মুখর ছিল আরাফাতের ময়দান।
অন্যান্য বছর ৯ জিলহজের দিনটিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হতেন আনুমানিক ২৫ লাখ হাজি। তবে করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে হজ হয়েছে। গতবার ৬০ হাজার মানুষ হজ পালন করেছেন। এবার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ১০ লাখ হাজির পদচারণায় মুখর হয়েছে আরাফাতের ময়দান।
করোনার বিধিনিষেধের কড়াকড়ি না থাকায় হাজিদের মধ্যে এবার ছিল অন্যরকম এক আনন্দ।ভবিষ্যতেও যে কোনো বিধিনিষেধের কারণে ইবাদতের সুযোগ না কমানোর প্রার্থনা ছিল হজের খুতবাতেও।
এদিন হজের খুতবা দিয়েছেন সৌদির সাবেক বিচারমন্ত্রী ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের বর্তমান মহাসচিব শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা।স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়) মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা শুরু করেন তিনি।
খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের ঐক্য কামনার পাশাপাশি মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তির দোয়াও করেছেন হজের খতিব। মুসলিমদের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় হজের খুতবায়। আহ্বান জানানো হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষার।
২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে আরবি ভাষায় খুতবা দেন ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা। সেই খুতবা তাৎক্ষণিকভাবে আরও ১৪ ভাষায় (সংক্ষিপ্ত পরিসরে) অনুবাদ করা হয়, এর মধ্যে ছিল বাংলাও। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা শুরুতে আল্লাহতায়লার প্রশংসা ও রাসূল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন।
এরপর কয়েকটি হাদিস পাঠ করে তিনি বলেন, সর্বোত্তম মানুষ সেই যে কল্যাণের পথে চলে। উম্মাহর উচিত একে অপরের প্রতি সহানুভূতির আচরণ করা। আল্লাহর রহমত সহানুভূতিশীলদের একেবারে কাছে।
আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরাতে হজের খুতবা দেওয়ার সময় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ছাড়া মুসলমানদের আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহতায়লা বলেছেন, তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক না করতে এবং তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে না চাইতে। আল্লাহতায়লা অত্যন্ত দয়াশীল।
খতিব বলেন, আল্লাহতায়লা মানুষকে নিজের ইবাদতের জন্য তৈরি করেছেন। আল্লাহতায়লা আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মানুষকে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে বলেছেন এবং তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছেন।
আল্লাহতায়লা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। কুরআন শরিফ অন্যান্য আসমানি গ্রন্থগুলোর সত্যায়ন করে। আল্লাহতায়লা কুরআনে হজ ফরজ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কাজে প্রজ্ঞা অবলম্বনের কথা বলেছেন।
হজের খুতবায় আরও বলা হয়, আল্লাহ পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ পিতা-মাতার পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, যে বান্দা নিজের ওপর জুলুম (পাপাচার) করে তার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে পারে না।
শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ইসা বলেন, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহতায়লা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে মানবজাতির জন্য এমন বিধিবিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে সব শ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে এটি ফুটিয়ে তুলতে হবে।