বৃদ্ধবয়সে প্রতিদিন ভোর বেলা পায়ে হেঁটে যান শহরের এক মুদি ব্যবসায়ীর দোকান ঝাড়ু দিতে।এরপর এপাড়া ওপাড়া ঝিয়ের কাজের জন্য ছুটেন তিনি।কারো বাড়ীতে কাজ পেলে সেদিন পেটে ভাত জুটে।যেদিন কাজ জুটে না সেদিন উপোষ থাকতে হয় নিঃসন্তান বিধবা লাইলী বেওয়া (৪২)
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের পৌরসভা এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের টাপু ভেলাকোপা গ্রামের মৃত নুরুল হকের স্ত্রী লাইলী বেওয়া। নেই জমি- জমা,নেই থাকার ঘর।ভাতিজার দেয়া ৫টি টিন ও ৪টি বাঁশের খুটির উপর গড়া টিনের ছাপড়ার ভিতর জীবন যাপন করছেন তিনি।উপার্জনকারী নিজেই ছাড়া তিনকুলে কেউ নেই তার। বৃদ্ধ বয়সে কাজের জন্য ছুটতে হয় অন্যের বাড়ি বাড়ি।নিজের চুলায় কতদিন ধরে যে রান্না হয় না সেটাও মনে করতে পারছেনা লাইলী বেওয়া।প্রায় দিনই তাকে না খেয়ে থাকতে হয়।
জনপ্রতিনিধির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাচ্ছেন না কোন কার্ড।আশ্বাস আর সান্ত্বনা নিয়ে প্রতি বছরই ফেরত আসেন তিনি।কাউকে টাকা দিতে না পারায় তার কোন কার্ড হচ্ছে না বলে জানান তিনি। অভাব আর কষ্টে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলেন "সবার মরন হয়, আমার ক্যান হয় না।"
লাইলী বেওয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, জীবন যেন তার আজন্ম দুঃখে গড়া।গরীব বাবা ১২ বছর বয়সে বিয়ে দেন লাইলীকে।কিন্তু সংসার বুঝে উঠার আগেই তিনি স্বামীকে হারান।চোখের সামনে রঙীন স্বপ্ন ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়। কিশোরী বয়স থেকে গায়ে উঠে বিধবার সাদা কাপড়। এটাই তার যেন ছিল তার আজীবনের সম্বল।স্ত্রীর আগে স্বামী মারা যাওয়ার সামাজিক কুসংস্কারগুলো তখন গলা টিপে ধরে লাইলীর জীবন।ইচ্ছে থাকা সত্বেও লোকমুখে স্বামী খেকো দূর্নামের জ্বালায় আর দ্বিতীয় বিয়ের পীড়িতে বসার সৌভাগ্য হয় নি তার।এভাবে একাকিত্বে পথ হাঁটেন কিশোরী বয়স হতে যৌবন ও বার্ধক্যের সীঁড়িতে।দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিধবা পরিচয় নিয়ে নিঃসন্তান লাইলী বেগম যেন বেঁচে আছেন জীবন্ত লাশ হয়ে।
প্রতিবেশী সালাম মিয়া বলেন,বিধবা লাইলী বেওয়ার দুঃখের শেষ নাই।নাই স্বামী, নাই সন্তান।ভাতিজা একজন আছে সেও গরীব।দিনে আনে দিনে খায়।লাইলীর খোঁজ খবর নেওয়ার মত কেউ নাই।মেম্বার চেয়ারম্যান যদি একটা বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা করে দিতো তাহলে লাইলীর উপকার হতো।
তিনি আরো বলেন,লাইলীর ঘর দুয়ারো নেই। সরকার কত মানুষকে ঘর তুলে দিচ্ছে ওর যদি একটা ব্যবস্থা করতো।
লাইলী বেগম বলেন,বাপুরে আমার কপাল দুঃখের কপাল।স্বামী নাই, সন্তান নাই। কে আমার দুঃখ ঘুচাবে?একটা কার্ডের জন্য কতবার চেয়ারম্যান মেম্বারকে বলছি কোন কাজ হয় নাই।দুনিয়া টাকার খেলা টাকা যদি দিতে পারতাম,তাহলে অনেক আগেই কার্ডের ব্যবস্থা হতো।ঘর দুয়ার তো নাই এক খান বিধবা ভাতার কার্ড সেটাও কপালে জুটছে না।
৬নং ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার মোঃ বলেন,বিধবা লাইলী বেগম কে চিনি।গত বছর উনার বিধবা কার্ড হওয়ার কথা ছিল সঙ্গত কারনে হয় নাই।তবে এ বছরেই হয়ে যাবে।তার বিধবা ভাতার জন্য অনলাইন নাম সাজেস্ট করা হয়েছে খুবই দ্রুত কার্ডের ব্যবস্থা হবে।
পৌর চেয়ারম্যান মোঃ কাজিউল ইসলাম বলেন, যত তারাতাড়ি সম্ভব লাইলী বেগমের বিধবা কার্ডটির ব্যবস্থা করা হবে।বিধবা কার্ডটি যাতে সে দ্রুত পায় সে চেষ্টা করবো।তবে আশ্রয়ন প্রকল্পের আবাসনে উনার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।সেখানে তিনি যেতে চেয়েছিলেন না।এরপরও কোন সুযোগ সুবিধা আসলে দেয়া হবে।