কুড়িগ্রামে এক সময় ১৫ টি যাত্রাপালার দল ছিল।গ্রাম বাংলার মানুষের দুঃখ কষ্ট,আনন্দ বেদনার চিত্র উঠে আসতো যাত্রাপালায়। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মিশে থাকা সেই যাত্রাপালা এখন বিলুপ্তির পথে।আগে যাত্রাপালা দেখতে মানুষজন গ্রাম শহর বন্দর গঞ্জে আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে ভীড় করতো আজ চিরচেনা সেই যাত্রাপালা আর চোখে পড়ে না।আধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট ও মোবাইলের কারনে যাত্রাপালার অনেকটা পিছিয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই।এ এছাড়াও যাত্রাপালার সাথে জড়িত কিছু অসাধু লোকজনের কারনে জুয়া আর দেহ প্রদর্শনের কারনে যাত্রাপালার ভাটা পড়ে। গুটি কয়েকজনের কারনে এ সংস্কৃতি আজ বন্ধ হয়ে গেছে।এর প্রভাবে যাত্রা দলের সাথে সংশ্লিষ্ট কুশলী মাষ্টার,শিল্পী, অভিনেতা ও সঙ্গীত পরিবেশনকারী এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশা খুঁজে নিয়েছেন। অনেকেই অর্থ ও খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কথা হয় কুড়িগ্রাম যাত্রা ফেডারেশন এর সম্বনিয়ক সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিকের সাথে তিনি জাগো নিউজকে বলেন,দীর্ঘ এ যুগ ধরে যাত্রাপালা একে বারে বন্ধ হয়ে আছে।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ কোন প্রোগ্রাম ছাড়া যাত্রা শিল্পীদের কেউ খোঁজ রাখে না।এখন আর যাত্রাপালার ডাকও আসে না।উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পীরা দুঃখ কষ্টে আছেন।সরকারের উচিত পুরোনো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে নতুন ভাবে যাত্রাপালার জাগরণ ঘটা।তা না হলে আমাদের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গন থেকে যাত্রাপালা নিচিহ্ন হয়ে যাবে।নতুন প্রজন্মকে জানাতে ও সমাজে যাত্রাপালাকে আবার ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রতীক যাত্রাপালা দেখতে আসা মোঃ আজগার আলী বলেন,আমি ছোটবেলায় আমার পরিবারের সাথে যাত্রাপালা দেখতে গেছিলাম।যাত্রাপালার শিল্পীদের সমাজ সচেতনমুলক পালা,গরীবের ভাষা,হাচন রাজা,কমলার বনবাস,দুঃখি বানেচা,গহর বাদশা বানেচা পরী এসব যাত্রা অনুষ্ঠান দেখতাম।এখন আর যাত্রা চোখে পড়ে না।আজ যাত্রা দেখে খুব ভালো লাগলো। মনে হয় আমি আমার কিশোর যৌবনে ফিরে গেলাম।
তিনি আরো বলেন, এখন আর যাত্রাপালার কাজের ডাক আসে না।আগের মত আয় রোজগার হয় না।বর্তমানে যাত্রাপালা অনুষ্ঠান না হওয়ায় শিল্পীরা কষ্টে আছেন। আমরা চাই যাত্রা পালা ফিরে আসুক।
কুষান যাত্রাপালার শিল্পী সালমা বেগম বলেন,আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে যাত্রাপালার সাথে ছিলাম আছি।যাত্রা যেন আমার হৃদয়ের একটি স্পনদন।এই যাত্রা পালা বন্ধ হওয়ায় আমরা শিল্পীরা অনেক কষ্টে আছি। আমরা আবার যাত্রা পালায় ফিরে যেতে চাই।সানাইয়ের সুর,কথার ঝংকার আর ঢাক তবলার প্রতিধ্বনিতে আবারো গ্রাম বাংলা মুখরিত হউক এটাই আমার এক মাত্র প্রত্যাশা।
,কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোঃ আলমগীর কবির বলেন,বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি যাত্রাপালার ব্যপারে উৎসাহী। যাত্রাপালা প্রদর্শনের বিষয়ে কোন বাঁধা নেই।শুধু যাত্রাপালা নয় শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে কাজ করা শিল্পমনা মানুষদের মূল্যায়নে বিভিন্ন অনুদান ও সহযোগিতা করে আসছে।