স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ৯ নম্বর সেক্টরের মধ্যে বৃহত্তর বরিশালের রাজাপুরের আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানিরা। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শত্রæমুক্ত হয় রাজাপুর থানা, বন্ধ হয় গণহত্যা।
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী রাজাপুর থানা আক্রমণ করে। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। রাতভর যুদ্ধের পর ২৩ নভেম্বর ভোর রাতে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। রাজাপুর থানা ছিল বরিশাল সাব-সেক্টরের অধীনে। সাব-সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন ওমর। রাজাপুরের কানুদাসকাঠিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন। রাজাপুর থানায় সম্মুখযুদ্ধ শুরু হলে ক্যাপ্টেন ওমর এ যুদ্ধে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন ওমর ঝালকাঠি জেলায় একমাত্র বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তিনি মো . শাহজাহান ওমর নামে সকলের কাছে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে রাজাপুর থানা কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন কেরামত আলী আজাদ। ২৩ নভেম্বর রাজাপুর থানা মুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে আশপাশের মুক্তিকামী মানুষ ছুটে এসে থানা দখলে নেয়।
দিনটিকে ঘিরে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য একমাত্র রাজাপুর প্রেস ক্লাব প্রতিবছর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে গল্পে গল্পে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ ব্যানারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় রাজাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গল্পে গল্পে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। রাজাপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন তৎকালীন রাজাপুর অ লের মুবিজ বাহিনীর কমান্ডার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ নূর হোসেন। এ সময় বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত স্থানীয় সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে প্রথমবারের মত এ বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কমান্ড রাজাপুর উপজেলা শাখার আয়োজনে রাজাপুর থানা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে পতাকা উত্তোলন ,বদ্ধভূমি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহব্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহ জালাল হাওলাদারের সভাপতিত্বে, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাজাপুর উপজেলা শাখা’র সদস্য সচিব দুলাল তেওয়ারির স ালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক দুলাল শাহা, উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এইচ.এম খায়রুল আলম সরফরাজ। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাজাপুর উপজেলা শাখা’র যুগ্ম-আহব্বায়ক জাহিদুল ইসলাম,নজরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ,সাইফুজ্জামান রুবেল সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ।