ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরের শহর রক্ষা বাঁধে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক চলছে। বাঁধের দুই পাশে ও খোদ বাঁধের ওপরে স্থাপনা নির্মাণের ফলে ঝুঁকি বাড়ছে শহর রক্ষা বাঁধের। পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড়ের জয়বাংলা চত্বর থেকে থানারঘাট হয়ে কাচারি ফেরিঘাট পর্যন্ত বাঁধের ওপর এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
অবৈধ এসব স্থাপনায় দেয়া হয়েছে বিদ্যুত বিভাগের বৈধ সংযোগ! অনেকে বাঁধের জায়গা প্লট আকারে অন্যের কাছে বিক্রিও করছে। আবার অনেকে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছে। অনেক স্থাপনায় ভাড়া দেয়ার সাইনবোর্ড ঝুলছে। কেউবা বাঁধের পাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে ভিটির ওপর সীমানা করে রেখেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধের ওপর এসব স্থাপনা নির্মাণে সহায়তা দিয়ে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করে থাকায় দিন দিন অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বর্ষা এই মৌসুমে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এই শহর রক্ষা বাঁধ।
ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারির অভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে শহর রক্ষা বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাত উল জামিল জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সুত্রে জানা যায়, পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের খাস খতিয়ানের জায়গায় এই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন।
বাঁধের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন থেকে ময়মনসিংহ শহর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রহ্মপুত্রের ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় কয়েক দফায় পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের জয়বাংলা চত্বর থেকে থানারঘাট, কাচারি ফেরিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যান হয়ে খাকডহর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের কোন নজরদারি না থাকায় দিন রাতে জবরদখল হচ্ছে এই শহর রক্ষা বাঁধ। সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁধের দুই পাশে ও বাঁধের ওপরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। বাঁধের ওপর ইটের গাঁথুনি দিয়ে টিনশেডের এসব সেমি পাকা স্থাপনায় রয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। ছাপড়া বসতঘরসহ এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে হোটেল, রেস্তরাঁ, চায়ের স্টল, ভাঙ্গাড়ির দোকান, শো রুম, ওয়েল্ডিং কারখানা, ফার্নিচার ও মুদি দোকান। পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের জয়বাংলা চত্বর থেকে কাচারি ফেরিঘাট পর্যন্ত বাঁধের ওপর এরকম তিন শতাধিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
এর মধ্যে ছোট বড় অর্ধ শতাধিক বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নসু মিয়া ও মৃত মফিজ উদ্দিনের স্বজনসহ স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি বহিরাগতদের বাঁধের ওপর স্থাপনা গড়ে তোলার সহায়তা দিয়ে অর্থকড়ি নিচ্ছে। আর বিদ্যুত বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ একশ্রেণীর কর্মকর্তা অবৈধ এসব স্থাপনায় বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে পকেট ভারি করছে।
পাটগুদাম ব্রিজের জয়বাংলা চত্বর থেকে পুরনো ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে গত এক মাসে অন্তত ১০টি ছোট বড় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আরও স্থাপনা নির্মাণের সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে।