ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর ওই নারীর পেট থেকে বের করা হলো রক্ত মোছার গজ (মপ)। এই দীর্ঘ সময়ে গজটি ওই নারীর পেটের নাড়ি ছিদ্র করে ঢুকে যায় এবং তাতে পচন ধরে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
অপারেশনটি করা হয়েছিল ভালুকা উপজেলা সদরে অবস্থিত ডিজিটাল প্রাইভেট হাসপাতালে।
প্রসূতির পরিবার ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলার আমীরাবাড়ী গ্রামের শাজাহান মোল্লার স্ত্রী ফাওজিয়া আক্তারের (৩০) প্রসব ব্যথা শুরু হলে গত ১৩ এপ্রিল তাঁকে ভালুকার ডিজিটাল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক কনসালট্যান্ট ডা. মফিজ ওই হাসপাতালে ফাওজিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
অপারেশনে ফাওজিয়ার এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। এটি তাঁর তৃতীয় সন্তান।
১৬ এপ্রিল ফাওজিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই তাঁর পেট ব্যথাসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। কয়েক দিন আগে পেট ফুলে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে ফাওজিয়াকে ভালুকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পর্যায়ে ডাক্তাররা ধারণা করছিলেন নাড়িতে প্যাঁচ লেগে ফাওজিয়ার পেট ফুলতে পারে।
ময়মনসিংহের ভাটিকাশর এলাকার আইডিয়াল লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. শওকত আলী ফাওজিয়ার আবার অপারেশন করেন এবং এই অপারেশনে তাঁর পেট থেকে বের হয়ে আসে বড় আকৃতির একটি মপ (রক্ত মোছার গজ কাপড় জাতীয় দ্রব্য, চিকিৎসার ভাষায় মপ)। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে ফাওজিয়ার পেটের নাড়ি ছিদ্র হয়ে মপটি ঢুকে যায় এবং নাড়িতে পচন ধরে। এতে তাঁর পেট ফুলতে শুরু করে।
ফাওজিয়ার এই অপারেশন টিমের সদস্য সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ রবিন বলেন, ফাওজিয়াকে যখন এই হাসপাতালে আনা হয়, তখন তাঁর অবস্থা খুবই জটিল ছিল। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. শওকত আলী ঝুঁকি নিয়ে তাঁর অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনে রোগীর পেট থেকে একটি মপ বের করা হয়।
মপটি তাঁর নাড়ি ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। এ জন্য তাঁর নাড়িতে পচন ধরেছে। তাঁর নাড়ির পচে যাওয়া অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং বিকল্পভাবে তাঁর পায়খানা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিন মাস পর আরেকটি অপারেশন করতে হবে। রোগীর অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।’
তিনি জানান, ফাওজিয়ার সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তার হয়তো ভুলে মপটি তাঁর পেটে রেখেই পেটের কাটা স্থানে সেলাই করে ফেলেন।
ফাওজিয়ার স্বামী শাজাহান মোল্লা জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের পর বাড়িতে নেওয়ার পর থেকেই পেট ব্যথাসহ ফাওজিয়ার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তাঁকে ব্যথা উপশমের নানা ওষুধ খাওয়ানো হতো।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন বর্গা চাষি। অন্যের জমি চাষ করে কষ্ট করে সংসার চালাই। বর্তমানে সুদে টাকা ধার করে স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছি। সব কিছু জানা সত্ত্বেও ডিজিটাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তার এখনো আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।’তিনি জানান, এই ঘটনায় তিনি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন করা ডা. মফিজ বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। অপারেশন করলে শতকরা দু-একটিতে সমস্যা হতেই পারে। তা ছাড়া যে রোগীর সমস্যা হয়েছে তার পরিবারের লোকজন যদি হাসপাতালে যোগাযোগ করত, তাহলে আমরা তার চিকিৎসার ভার গ্রহণ করতাম।
ভালুকা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।