ময়মনসিংহে পৌরসভা নির্বাচনে তফসিল ঘোষনার পুর্বেই বাড়ছে উওেজনা। ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচরণা ও পোস্টার টাঙ্গীয়ে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক চেয়ে একাধিক মেয়র প্রার্থী মাঠে নামলেও বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। প্রার্থীদের মধ্যে চলছে অসম প্রতিযোগিতাও। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই গোলযোগ হতে পারে এমন শঙ্কা রয়েছে স্থানীয়ভাবে। সমপ্রতি এক মেয়র প্রার্থীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। বিগত নির্বাচনগুলোতেও প্রার্থীদের পেশিশক্তির প্রদর্শন ও সংঘর্ষের ঘটনা ছিল। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের পৌরসভাগুলোতে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। তবে কৌশল অবলম্বন করে সংঘাত এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলো উদ্যোগী হবে এমনটি প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোট হবে জেলার ফুলপুর, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, গফরগাঁও ও ভালুকা পৌরসভায়। ইতিমধ্যে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক চলাচ্ছেন জনসংযোগ। সভা করে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বর্তমান পৌর মেয়ররাও নিজেদের বিগত বছরের অর্জনের ফিরিস্তি তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নিজের জন্য সমর্থন চাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করে আগামীতে নির্বাচিত হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন তারা । পৌরসভাগুলোতে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা প্রার্থী হয়ে মাঠে অবস্থান নিলেও বিএনপি ও অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থেকে এখনও প্রকাশ্যে মাঠে না নামলেও জনসম্পৃক্তকরণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় গ্রুপিং দেখা দিয়েছে। একে অপরের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও জনসম্পৃক্ত বোঝাতে দল ভারী করে প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা চলায় নির্বাচন যত এগোচ্ছে নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরে উত্তেজনা তত বাড়ছে।
এবারের পৌর নির্বাচনে গৌরীপুর থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মাসুদুর রহমান শুভ্র। নির্বাচনী জনসংযোগ শেষে আড্ডারত অবস্থায় গত ১৭ অক্টোবর রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই এখানে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী গৌরীপুরে মাঠে থাকার পাশাপাশি বিএনপিরও ছয় প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। গৌরীপুর পৌর বিএনপি নেতা ও মেয়র প্রার্থী বেগ ফারুক আহমেদ বলেন, বিএনপি কোনো গোলযোগ পছন্দ করে না। সন্ত্রাস ও ঝামেলামুক্ত পৌর নির্বাচন হবে এমনটি প্রত্যাশা এই প্রার্থীর।
ঈশ্বরগঞ্জেও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন অন্তত পাঁচ প্রার্থী। বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস ছাত্তার, সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবুল খায়ের, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল জলিল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পলাশ গুণ মাঠে রয়েছেন। প্রার্থীরা নিজের সামর্থ্য প্রদর্শন ও আগামী নির্বাচনে ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচন ঘিরে রয়েছে উত্তেজনাও। একই অবস্থা নান্দাইলেও। সেখানে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়ার জন্য লবিংয়ের পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন। তবে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে আজিজুল ইসলাম পিকুল মাঠে কাজ করছেন। প্রায় একই অবস্থা ত্রিশালেও। তবে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হন এ পৌরসভায়। গেল নির্বাচনে বেশ উত্তপ্ত ছিল ত্রিশাল। এ বছরও চাপা উত্তেজনা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি বিএনপি থেকে আমিনুল ইসলাম আমিন সরকার মেয়র হতে প্রচার চালাচ্ছেন। ত্রিশালের বর্তমান মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গেলবার নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন কাজ করে আগামী নির্বাচনেও ভোটারদের সমর্থন ও প্রত্যক্ষ ভোটে তিনিই নির্বাচিত হবেন এমনটি প্রত্যাশা তার।
জনউদ্যোগ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেশে উৎসবের মতো। কিন্তু ইদানীং প্রতীক পেলেই নির্বাচিত হয়ে যাবেন এমন ধারণা থেকে প্রার্থীরা অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। সহিংসতা দেখা দেয়। তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে পারেন।
ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অংশ নিতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন তারা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসম্পৃক্তকরণ কাজে মাঠে রয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তারা সে অনুযায়ী কার্যক্রম চালাবেন।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, সতর্কতার সঙ্গে এবারের নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন। প্রার্থীরা নিজেদের তুলে ধরার জন্য মাঠ পর্যায়ে জনগণের আস্থা অর্জন ও উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। একে অপরের প্রতি রুখে দাঁড়ানোর কোনো প্রমাণ নেই। বিষয়গুলো তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি আরও বলেন, গৌরীপুরে বিএনপির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একজন মেয়র প্রার্থীকে খুন করেছে। এটি আইনি প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। এলাকাগুলো থেকে প্রার্থী বাছাই করে তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবেন। কেন্দ্র প্রার্থীর রাজনৈতিক ইতিহাস বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ দিবে।