বানিয়াচংয়ে ঐতিহাসিক মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার (১৮আগস্ট) বেলা এগারটায় নবনির্মিত মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়ার পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বেসরকারি সদস্যদের বিল ও বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য আবুল কাশেম চৌধুরী,ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আমীন,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার,সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইফফাত আরা জামান উর্মি,বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান,বীরমুক্তিযোদ্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন মাষ্টার,সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি মজিদ খান বলেন,মাকালকান্দি গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দেয়ার। আমরা সেটা করে দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এই জন্য নিজেকে খুব ধন্য মনে করছি। তিনি আজকের দিনে গণহত্যায় নিহতদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করেন।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া,আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক নজরূল ইসলাম,ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ আলী,কাগাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মোহিত চৌধুরী,৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাস,উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ জেড এম উজ্জ্বল, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আসশাফ চৌধুরী বাবু, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদ হোসেন খান মামুন, হোসেন,গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্র্শী প্রাণগোপাল দাশ, সুপ্রাজিত চৌধুরী, ৫নং দৌলতপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মলাই মিয়াসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর পূর্বে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঐতিহাসিক মাকালকান্দি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ আনুষ্ঠানিকভাবে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে এই দিনে পাক হানাদাররা শতাধিক নারী-পুরুষ হত্যা করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদদের পরিবারকে দেওয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি। জানা যায়, হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ থেকে ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট ভোরে অর্ধশতাধিক নৌকা নিয়ে রওয়ানা দেয় পাক হানাদার বাহিনী। বানিয়াচং থেকে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের সাথে যোগ দেয়।
আনুমানিক সকাল ৮ ঘটিকায় ঘাতকরা পৌছায় বানিয়াচং উপজেলার কগাপাশা ইউনিয়নের দূর্গম পল্লী এলাকা মাকালকান্দি গ্রামে। কিন্তু গ্রামবাসী চন্ডি মন্দিরে মনসা পুজা করছিলেন। কোন কিছু বুঝার আগেই পূজায় মগ্ন নিরীহ নরনারীদের উপর ঝাপিয়ে পরে নরপশুর দল। চালানো হয় মুহুর্মুহু গুলি। শুধু তাই নয় কাতার করে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর করা হয় ব্রাশফায়ার। কাতারে কাতারে দাঁড় করিয়ে শতাধিক নারী পুরুষ হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তবে ৭৮ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়।
নরপশুরা মিনতী রানী পাল নামের এক পূজারীর কোল থেকে তার ৩ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। হানাদাররা সেদিন চালায় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। যারা নৌকা দিয়ে পালাতে পেরেছিলেন তারা জীবনে বেঁচে যান। ঝুপঝাঁেপর আড়ালে লুকিয়ে থেকে প্রাণ রক্ষা করেন অনেকই। হানাদাররা গণহত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি।
বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আতংক কেটে যাওয়ার পর নিহতের স্বজনরা বাড়িতে আসার পূর্বেই শতাধিক লাশ নদীতে পঁচে ভেসে উঠে। ফলে পঁচা দূর্গন্ধের কারনে নিহতের স্বজনরা লাশগুলো সৎকার না করে পাশের নদীতে ভাসিয়ে দেন। নিহতদের আত্মীয়রা আক্ষেপ করে জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও শহীদ পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।