দিনাজপুরে গ্রিনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে শুক্রবার (২৭ মে) লায়ন্স ক্লাবের আয়োজনে একই সঙ্গে ৪০ জন বর-কনের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দক্ষিণে এগোতেই মেলে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড। এখানেই লায়ন্স ক্লাবের পরিচালনায় চলে শিশু নিকেতন হোম। ১০১ জন এতিম শিশুকন্যাকে এখানে লোখাপড়ার পাশাপাশি হাতের কাজ, সেলাই ছাড়াও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে শুক্রবার ৪০ জন এতিম কন্যার উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ে দেওয়া হলো। ৪০ জন পাত্রই ছিলেন দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার। তাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ গার্মেন্টে চাকরি করেন, কেউবা কৃষিকাজ আবার ওয়ার্কসপের দোকানেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কেউ।
এ দিন বিয়ের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন লায়ন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ।
শিশু নিকেতনের ওই এতিম মেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি সবাইকে মহৎ কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যৌতুক আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। যে ৪০ জন ছেলে যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করেছে এতিম কন্যাদের, সারা দেশে এটি দৃষ্টান্ত।
এ ব্যাপারে শিশু নিকেতনের সভাপতি ও জোন চেয়ারম্যান (ক্লাবস) লায়ন মোজাফর আলী মিলন গণমাধ্যমকে জানান, এই শিশু নিকেতন থেকে প্রতিবছর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। এবার একসঙ্গে ৪০ জন এতিম কন্যাকে বিয়ে দেওয়া হলো। তাদের সাইকেল, সেলাই মেশিনসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের দর্জির দোকান রয়েছে। বিনা যৌতুকে শিশু নিকেতন হোমের এতিম মেয়ে লিজা আক্তারকে বিয়ে করেছেন।
রাজ্জাক বলেন, আজ আমার মতো ৪০ জন ভাই যৌতুক না নিয়ে এতিম মেয়েদের বিয়ে করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন সুখী হতে পারি সবার কাছে সে দোয়া চাই।
হামজাপুর গ্রামের ছেলে রবিউল ইসলামের বাবা রায়হানুল ইসলাম বলেন, যৌতুক ছাড়াই আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। আমি চাই সব অভিভাবক এ কাজটি করুক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি রেজা হুমায়ুন চৌধুরী শামীম, দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মর্তুজা আল মুঈদ, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকসী বাচ্চু, শহর সমাজসেবা অফিসার মাইনুল ইসলাম, করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট লায়ন সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
শিশু নিকেতন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে একসঙ্গে শিশু নিকেতনের ২০ এতিম মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে করোনার কারণে এভাবে একসঙ্গে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিশু নিকেতনটি। এখানকার বাসিন্দাদের এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত শিশু নিকেতনের ১৭৪ জন মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।