দফায় দফায় বন্যায় গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি না কমতেই আবারো বন্যায় পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। যাতায়াতে দুর্ভোগের পাশাপাশি, খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং গো-খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় এবং কাজ না থাকায় অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অপরদিকে, বীজতলাসহ সবজি ক্ষেত এবং মৎস্য খামার তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন চাষি ও খামারীরা। থেমে থেমে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া এবং তিস্তা নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলমান বন্যায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ। চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এবং আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে কোমর পরিমাণ পানির মধ্যে বাড়িতেই অবস্থান করছে বানভাসি মানুষ।
বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসি মানুষের দিন কাটছে একবেলা খেয়ে আর একবেলা না খেয়ে। একই সাথে শিশু খাদ্য, বিশেষ করে পশু খাদ্য নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। যে পানিতে পয়ঃনিষ্কাশন সেই পানিতেই গোসল আবার বাধ্য হয়ে সেই পানিই পান করছেন বানভাসি মানুষেরা।
যদিও বন্যা দুর্গত এসব এলাকার মানুষদের জন্য এ পর্যন্ত ৫৩০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য চার লাখ টাকা, গো-খাদ্য চার লাখ টাকাসহ ৫ হাজার ৬৫০টি শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে বানভাসিদের। অন্যদিকে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যা কবলিত এলাকার বসতবাড়ি একটানা দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বানভাসি মানুষেরা চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েছে।
বিশেষ করে কাঁচা ঘরবাড়িগুলো বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘরগুলো পড়ে যাওয়ার ভয়ে বেশ কিছু মানুষকে আঙ্গিনায় তাঁবুর নিচে মাচা করে থাকতেও দেখা গেছে। ঘরের ভিতর কোমর পরিমাণ পানি হওয়ায় কেউ কেউ বসবাস করছেন নৌকায় আবার কেউ কেউ কলা গাছের ভেলায় ছাগল আর মুরগীর সাথে বসবাস করছেন।
অপরদিকে বন্যায় তলিয়ে আছে আমন বীজতলা, পাট ক্ষেত, আউশ, চীনা বাদাম, মরিচ ও ঢেঁড়সসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষেত। ডুবে থাকা ফসল সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। এছাড়া চার উপজেলায় মৎসজীবিদের চাষ করা প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন মৎস বিভাগ।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, বন্যার্ত মানুষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী মজুদ রয়েছে। বানভাসি মানুষের নিয়মিত খোঁজ খবর নিতে চার উপজেলার চারটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকল বানভাসিদের কাছে পৌঁছাতে হয়তো কিছুটা সময় লাগছে। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল বানভাসিরাই ত্রাণ পাবে বলেও জানান তিনি।