আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকার সাঁওতালরা তাদের বাপ দাদার জমি ফেরত, নিহত তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ হত্যা ও সাঁওতালদের বাড়ী ঘরে আগুন লাগানোর সাথে যুক্ত আসামীদের বিচারের দাবীতে রোববার(৯ই আগষ্ট) সাঁওতাল ও বাঙালিরা এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করে।
বিক্ষুব্ধ সাঁওতালরা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন, পতাকাসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মাদারপুর-জয়পুর সাঁওতাল পল্লী থেকে হেঁটে ১৪ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে গোবিন্দগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ শেষে মহাসড়কের থানা মোড়ে এসে এক সমাবেশ করে।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি মিহির ঘোষ, পরিবেশ আন্দোলনের আহবায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, কমিউনিস্ট পার্টি উপজেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারন সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাঁওতাল হত্যার মামলার বাদী থমাস হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী তৃষ্ণা মুর্মু, ভূমি সংগ্রাম কমিটির নেতা স্বপন শেখ, গণেশ মুর্মু, রাফায়েল হাসদা, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার প্রায় চার বছর হলেও তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। চুড়ান্ত অভিযোগ পত্রে ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত এজাহারভূক্ত আসামী ও প্রকাশ্যে সাঁওতালদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগকারী অতি উৎসাহী পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের নাম বাদ দেয়ায় তারা বিক্ষুদ্ধ হয়েছে।
তারা বলেন, সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুন লাগানোর ফুটেজ, ছবি প্রকাশ পেলেও এখন পর্যন্ত কোন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এর মাধ্যমে সাঁওতালদের সাথে পরিহাস করা হয়েছে। তারা বলেন বর্তমানে সিআইডি’র কাছে মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
সিআইডি’র কাছে মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে চার্জ প্রদানের দাবি করেন।তারা জানান বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বক্তারা আরো বলেন, করোনাকালীন সময়ে সাঁওতালদের জীবন জীবিকা দুবিসহ হয়ে পড়েছে, সাঁওতালরা অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছে, কিন্তু প্রশাসন থেকে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে ফিলিমন বাসকে বলেন, এই বিচারহীনতা প্রমাণ করে জাতিগত সংখ্যালঘু সাঁওতালদের কত অবহেলার চোখে দেখা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঁওতাল-বাঙালিরা মিলে এদেশ স্বাাধীন করেছে। স্বাধীনতার ৪৮বছর পর তারা নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। সেই ভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ।
এখন তাদের সেই হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত।এ কোন দেশে তারা বসবাস করছে। তিনি প্রশ্ন করেন এজন্যই কি মুক্তিযুদ্ধে তারা অংশ নিয়েছিলেন?