কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ৭১’র রণাঙ্গনের বীর সেনানী হাবিবুর রহমান খান ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবী করে সর্ব প্রথম যে মিছিল হয়েছিলো তা সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালণ ও মিছিল পূর্ব বটতলার সমাবেশ পরিচালনা করেন।
পরে তারা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট অচিন্তনীয় বিয়োগান্তুক অধ্যায়ের কালরাতের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সমগ্র বাংলাদেশের ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে যে তিনটি সেল গঠন করা হয় তার প্রতিটি সেলের সদস্য হিসেবে তিনি ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে তৎকালীণ শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন করে তোলেন।
১৯৭৯ সালে অবৈধ ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ ও তার আগমনকে প্রতিহত করার পাশাপাশি জিয়াউর রহমানকে তিনি শারিরীকভাবেও লাঞ্চিত করেন।
এর প্রতিশোধ হিসেবে জিয়াউর রহমানের সরকারী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ও এন এস আই এর যৌথ অভিযানে হাবিবুর রহমান খান গ্রেফতার হন। তাকে চোখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ১৯৮০ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। এর পর জিয়াউর রহমানের নানা প্রলোভনকে উপেক্ষা করে তিনি জার্মান চলে যান।
১৯৮৪ সালে তিনি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ বানারীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় বাধা প্রদান করলে জনসভা সফল করতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
১৯৯০ সালে তিনি নিজ উদ্যোগে শেখ কামাল পরিষদ গঠন করে এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শের অগ্রসৈনিক দুঃসময়ের ত্যাগী,পরিক্ষীত এবং মাটি ও মানুষের নেতা হাবিবুর রহমান খানের রয়েছে ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (কাদের-চুন্নু) কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ’র দায়িত্ব পান।
ওই সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তার ওপর আহবায়কের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। স্কুল জীবন থেকেই তার ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ১৯৬৫ সালে আইউব খান বনাম ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচনে তিনি ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন।
ওই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন তিনি বাবুগঞ্জের রহমতপুরে তৎকালীণ পুর্ব পাকিস্তানের স্পীকার আব্দুল জব্বার খানকে নাজেহাল করার ক্ষেত্রে সাধারণ জনতার সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালণ করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৯৬৮ সালে তিনি বানারীপাড়ার চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিএস নির্বাচিত হন।
ওই বছর ও ১৯৬৯ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭০ সালে তিনি বানারীপাড়ার চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হন।
ওই সময় তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বানারীপাড়া,উজিরপুর ও স্বরূপকাঠি অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা বেজ কমান্ডার হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
তিনি এসব এলাকায় ইপিআর,পুলিশ ও স্থাণীয় জনসাধারণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য সংগঠিত করতেও ভূমিকা রাখেন। ওই সময় হাবিব বাহিনীও গঠন করা হয়। ১৯৭২-৭৩ সালে তিনি উজিরপুর থানা ছাত্রলীগের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালণ করেন।
১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩-৭৪ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাবিবুর রহমান খান ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য ছিলেন।
পরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দলের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নিজ এলাকা ও কেন্দ্রে অগ্রণী ভূমিকা পালণ করেন।