ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় কংস নদের ভাঙন অব্যাহত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক পরিবার হয়ে পরেছে দিশেহারা।
কৃষক মন্নাছ আলীর (৫২) পাঁচ কাঠা জায়গাজুড়ে বসতবাড়ি ছিল।
সম্প্রতি ঢল নামার পর কংস নদে ভাঙন শুরু হয়। তখন কোনোমতে ঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করেছেন। কিন্তু গাছপালা আর জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি বাঁধের ওপর ঘর বানিয়ে থাকছেন। তবে সেটাও হুমকির মুখে।
মন্নাছ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার স্বদেশী ইউনিয়নের নাশুল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা। শুধু মন্নাছ আলী একা নন, তাঁর মতো অর্ধশতাধিক পরিবার কয়েক বছর ধরে নদের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁরা নদে বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা কংস নদ উপজেলার স্বদেশী ইউনিয়নের নাশুল্ল্যা গ্রাম, শাকুয়াই ইউনিয়নের ভাট্টা গোল্লাপাড়া, বাড়ইপাড়া, ঔটি পশ্চিমপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের মধ্য দিয়ে ভাটি দিকে বয়ে গেছে।
কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চারটি গ্রামের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। বসতবাড়ি হারিয়ে তাঁরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবার।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, স্বদেশী ও শাকুয়াই ইউনিয়নে নদের তীরবর্তী বসতভিটা রক্ষা করতে গ্রামবাসী নিজ নিজ উদ্যোগে বাঁশগাছের ডালপালা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। এতে নদের ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বালিপাড়া এলাকায় ভাঙনে গ্রামীণ রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ঠিক এর পাশেই ওট্রিপাড়া এলাকায় ঢলের প্রবল স্রোতে নদের বাঁধ ভেঙে কয়েক একর ফসলি জমিতে বালুর আস্তরণ পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নাশুল্ল্যা এলাকায় কয়েক একর ভূমি নদগর্ভে চলে গেছে। এতে প্রায় ৫০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কংস নদের বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
নাশুল্ল্যা গ্রামের শিউলী খাতুন বলেন, ‘অনেকে আয়ে দেইখ্যা যায়। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কিছুই তো করে না। আমরা অসহায়। সরকারিভাবে একটু সহযোগিতা করলে আমগর বিরাট উপকার অইতো।
একই এলাকার বাসিন্দা জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘তিন কাঠা জমি ছিল, চোখের সামনে সবটুকু নদে চলে গেছে। ভয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অন্যখানে চলে এসেছি। প্রতিবেশী অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। নদের পাড়ের বান্দের একটা ব্যবস্থা অইলে গ্রামবাসীর সুবিধা হবে।
শাকুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, নদের ভাঙন চলছে। কয়েক বছরের ভাঙনের কবলে দুটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে জন্য একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। দুই ইউনিয়নের নদের ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।