ব্যস্ত সড়কের পাশে জমে থাকা অল্প পানিতে গ্যাসের বুদবুদ শব্দ’। আতঙ্কিত মানুষ তাড়াহুড়া করে স্থানটি পার হন। কোথাও আবার লাইনের ছিদ্রে মৃদু আগুনও জ্বলতে থাকে। এমন দৃশ্য ময়মনসিংহ নগরীর অনেক এলাকায়। ফায়ার সার্ভিসের কাছে এ নিয়ে নিয়মিত বার্তা আসছে।
তিতাস কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বিষয়টি জানানো হলেও ছিদ্র সারাতে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকেন নগরবাসী।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) ময়মনসিংহে গ্যাস সরবরাহ করে। নগরীতে রয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার আবাসিক, ১৫৫ বাণিজ্যিক গ্রাহক ও ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। সড়কের পাশ দিয়ে অলিগলিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে গ্যাস সংযোগ।
সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি ও দীর্ঘদিনের জীর্ণ সংযোগ লাইনগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে উঠেছে। সরবরাহ লাইনের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র থেকে নিয়মিত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। অসাবধানতাবশত কেউ কেউ জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে দেওয়ায় আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে টাউন হল মোড় সড়কের পাশে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও আদালতে প্রবেশের রাস্তার মুখেই গ্যাস বেরুচ্ছে বুদবুদ আকারে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনাপাড়ের শাপলা স্কোয়ারের পাশে লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত হওয়া গ্যাসে আগুন ধরে যায়। মাহমুদুল হাসান তানভির নামে এক যুবক বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘দুপুরে পথচারী সিগারেট ফেলে দেওয়ায় গ্যাসের লিকেজে আগুন জ্বলে ওঠে। তার পর স্থানীয়ভাবে আগুন নিভিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তারা সংস্কারের আশ্বাস দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সংস্কার হয়নি।’
নগরীর নওমহল পীরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও গাঙ্গিনাপাড় এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষ এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আবুজর গিফারী বলেন, পাইপলাইনের লিকেজ থেকে বিভিন্ন এলাকায় বুদবুদ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রায়ই লোকজন তাদের কাছে ফোন করেন। নগরীর কাঠগোলা এলাকায় মাদ্রাসার পাশে বুদবুদ নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত থাকায় তিতাস কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান। তারা মেরামত করে এলেও আগের অবস্থা বিদ্যমান।
তিনি জানান, প্রায় প্রতিদিন গ্যাসলাইনের লিকেজের কারণে গ্যাস বেরিয়ে বুদ্বুদ বিষয়ে তাদের কাছে বার্তা আসে। এ নিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষকে তারা বলেছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা
ঘটতে পারে।
ময়মনসিংহের নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে বুদ্বুদ আকারে গ্যাস বেরুচ্ছে। তিতাস কর্তৃপক্ষের তৎপরতা চোখে পড়ে না। বিভিন্ন সময় ফোন করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায় না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
নারায়ণগঞ্জের মতো ট্র্যাজেডি যাতে ময়মনসিংহে না ঘটে, আশা করি তার আগেই তিতাস কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
তিতাসের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিক্রয় বিভাগের প্রকৌশলী শাহজাদা ফরাজী বলেন, সড়ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজে এবং বিভিন্ন সংস্থা সড়কের পাশে খোঁড়াখুঁড়ি করে।
এতে লাইনের প্রলেপ উঠে গিয়ে মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়। মূল সরবরাহ লাইনেও কিছু ছিদ্র রয়েছে। তিনি বলেন, চলতি মাসে ৪০টির বেশি ছিদ্র সংক্রান্ত অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। মূল লাইনের ছিদ্র সারাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মানুষ সচেতন হওয়ায় বেশি বেশি অভিযোগ আসছে। দুর্ঘটনা এড়াতে তারা সবসময় তৎপর। একই কথা বলেছেন তিতাসের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।