কক্সবাজার প্রতিনিধি : করোনার এই দুঃসময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জেগে ওঠা নতুন চর দখল নিতে রাতের আঁধারে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ২৬টি বসতবাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। লুটে নিয়েছে টাকা, গবাদিপশু, মূল্যবান মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ। এ সময় আগুনে পুড়ে মনোয়ারা বেগম (৫৫) নামের এক নারী মারা যান। বন্দুকের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মনোয়ারা ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের স্ত্রী।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খিলছাদক গ্রামের বেশ কিছু অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে দিনদিন সেই জমি নতুন করে জেগে ওঠে। যাদের জায়গা জেগে ওঠে তারা সেখানে বসতি গড়ে তোলেন। কিন্তু নদীর ওপার তথা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপারে এসে বারবার জেগে ওঠা জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোররাতে তারা খিলছাদক গ্রামের ২৬টি বসতবাড়িতে একযোগে অতর্কিত হামলা, লুটপাট চালায় ও আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তারা ফাঁকা গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এতে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ।চাকরিয়া মডেল থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, কৈয়ারবিলের খিলছাদক অংশে মাতামুহুরী নদী তীরে জেগে উঠা চরের জায়গার দখল নিতে এ তা-ব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একদল দাঙ্গাবাজ। এ হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এক নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, অমানবিক এ ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে।সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরও দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়। তা ছাড়া সরকারিভাবেও তাদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারা এ নারকীয় তা-বে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।