রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া (বরিশাল)প্রতিনিধি॥
যৌতুকের দাবিতে স্বামীর নির্যাতনের বিভীষিকাময় দিনগুলি ভুলে নতুন উদ্যমে শুরু করেছিলেন একজন হতভাগা নারী। জীবন সংগ্রাম করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে স্বাবলম্বি হয়ে ওঠেন পলি আক্তার নামের এক সন্তানের জননী সেই নারী।
বিবাহের পরেই পলির জীবনে নেমে আসে অমানিষার ঘোর অন্ধকার।
সেই অন্ধকারের মাঝে অনেক নির্যাতন হজম করে স্বামীর সংসারেই থাকতে প্রাণপন চেষ্টা করে পলি। তবে তার ওপরে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়,যখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে
পড়েন। এক পর্যায়ে দরিদ্র পলির পরিবারের কাছে দাবীকৃত যৌতুক না পেয়ে তার
ওপরে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় তার স্বামী উপজেলার সদর ইউনিয়নের
মাছরং গ্রামের আল-আমিন।
পলির অসহায় দরিদ্র বাবা আবু বক্কর মুন্সী ও মা জবেদা বেগম পেশায় ভিক্ষুক হওয়ায় মেয়ে জামাতার যৌতুকের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই পলিকে তালাক দেয় তার স্বামী আল-আমিন। পরে তার ঠাই হয় ভিক্ষুক বাবা-মায়ের সংসারে। পরে পলির কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান।
তার নাম রাখা হয় মো. মিরাজ (১১)। বর্তমানে সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী সে। দরিদ্র বাবা-মায়ের সংসারে থেকে একটি গাভী পালন করে সংগ্রামী জীবন শুরু করেন পলি। একে একে একটি গাভী থেকে পরে ৫/৬ টি ষাড় ও গাভী পালণ এবং বিক্রি করে সাবলম্বী হয়ে ওঠেন পলি।
ফলে সংগ্রামী জীবন যাপন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে বানারীপাড়া উপজেলা থেকে জীবন সংগ্রামী পলি জয়িতা নারীর সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হন। এদিকে নির্যাতন যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা পলির।
তার পরিবার অসহায় হওয়ায় পূর্ব থেকেই তাদের একই বাড়ি উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন’র ইন্দেরহাওলা গ্রামের মো. রিপন হাওলাদার,মো. রশিদ হাওলাদার,মো. আদম আলী হাওলাদার ও মো. রফিক হাওলাদার গং’রা গত ৩০ মে দুপুর ২টার সময় জবেদা বেগমকে জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে মারধর করে।
তার ডাকচিৎকারে মেয়ে জয়িতা পলি ও নাতী মিরাজ রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তাদেরকেও বেদম মারধর করে এবং পলির শ্লীলতাহানী ঘটায় বলে অভিযোগ
রয়েছে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ওই দিনই উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিবাদী করে জবেদা বেগম বানারীপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অপরদিকে জয়িতা পলির অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মঙ্গলবার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এভাবে আর কত নির্যাতন সইতে হবে তাকে এর কি শেষ নেই এ প্রশ্ন তার।