সড়কের পাশেই খোলা জায়গায় নিজের গায়ে থাকা বড় একটি ওড়না দিয়ে নিজেকে ডেকেই সড়কের পাশে চিৎকার করছিলেন এক নারী। একজন দুইজন করে বেশ কয়েকজন পথচারী জড়ো হলে জানা যায় অন্তঃস্বত্ত্বা ওই নারীর প্রসব ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পুরো শরীর রক্ত পানিতে ভেজা।
পরে তাঁকে লোকচক্ষুর আড়াল করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তাঁরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই অবস্থায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে ওই নারী জন্ম দেন একটি মৃত কন্যা সন্তান। অন্যদিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও শরীরের অবস্থা দুর্বল হওয়ায় প্রসূতি নারীর অবস্থা শঙ্কাটাপন্ন বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কানুরামপুর-ত্রিশাল সড়কের মধুপুর বাজারে একটি মাদরাসার সামনে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ওই সড়কের পাশে একটি আলিয়া মাদরাসার সামনে কাতরাচ্ছিলেন অজ্ঞাত নারী। এ ঘটনা দেখে এগিয়ে যায় দুই যুবক মনির ও ইদ্রিস কামাল। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. বদরুজ্জামান মামুন। তিনি তাৎক্ষনিক পাশের বাড়ির এক নারীকে ডেকে এনে সড়কে পড়ে থাকা নারীকে সরিয়ে স্যালাইন পুষ করে লোক চক্ষুর আড়ালে রাখেন।
খবর দেন ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে।
ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসার আগে ওই নারী চেয়ারম্যানকে জানান, তাঁর নাম রূপা আক্তার (২৫)। তিনি শেরপুর জেলার আব্দুল মান্নান ফকির নামে একজনকে বিয়ে করে তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় বসবাস করেন।
এ অবস্থায় তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা হলে বাচ্চা নষ্ট করারও হুমকি দিতো। তিনি নিজেকে স্বামীর কাছ থেকে আড়ালে রেখেই দিনপার করছিলেন।
এর মধ্যে বাচ্চা প্রসবের সময় এলে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এই অবস্থায় গত বুধবার রাতে কিছু ওষুধ এনে খেতে দেয় স্বামী মান্নান। এরপর আর কিছু বলতে পারেনি। পরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন এইটা তাঁর অপরিচিত জায়গা। এখানেই ফের প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তাঁর ধারণা স্বামী তাঁকে এখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মামুন জানান, তিনি এসে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেখানে দীর্ঘ সময় চেষ্টার ওই নারী মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। চেয়ারম্যান আরও জানান, ওই নারী নিজেকে আড়াল করতে অনেক কথাই গোপন রাখে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা.নুরুল হুদা খান জানান, কর্তব্যরত সেবিকা তাঁকে জানিয়েছেন ওই নারীর শরীরের ওপর অনেক ধকল গেছে। ভিতরে বাচ্চার অবস্থার উল্টো ছিল। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্তানকে বাঁচানো যেতো।