”চলে যাবে আজ আসিবে আগামী।
সেও থাকিবে না থেমে, থাকিবে শুধু স্মৃতিগুলো তার হৃদয় নামের ফ্রেমে।
কত শত স্মৃতি আর ভালবাসা” রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন প্রকৃতির এক নিবিড় মেলাবন্ধন।
অপরূপ সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতে একটুকরো সৌন্দর্যের প্রতিমার নাম প্যারিস রোড। নির্মল বাতাস।
পিচঢালা পরিষ্কার রাস্তা। সুবিশাল গগনশিরীষ গাছ রাস্তার দুই ধারে। সড়কের দুই ধারে বেড়ে উঠা গাছগুলো যেন একে অপরকে আলিঙ্গন করতে মরিয়া। গাছগুলোকে রৌদ্রস্নান করাতে সূর্যমামার কত প্রচেষ্টা। সূর্যের আলো কখনো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে, কখনো বা পাতায় আটকে যাচ্ছে।
এমনই আলো-ছায়ার খেলায় সৌন্দর্যের প্রতিমা হয়ে জেগে আছে একটি রাস্তা। সৌন্দর্যমণ্ডিত চির চেনা প্যারিস রোড। যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিমোহিত করেছে ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীকে। কত যুগলের রয়েছে রোমাঞ্চকর হাজারো স্মৃতি।
পিচঢালা রাস্তার দুই পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, আকৃষ্ট করেছে প্রকৃতিপ্রেমী হাজারো মানুষকে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা এমনকি রাতের বেলাও এখানে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষের সরব পদচারণা।
সন্ধা গড়ালেই গিটারের তারের আওয়াজে ভেসে আসে গানের সুর। চলতে থাকে গল্প, আড্ডা কেউবা মহুর্তগুলোকে ফ্রেমে বন্দি করে স্মৃতির এলবামে বন্দি করতে ব্যস্ত। এভাবেই প্রতিনিয়ত সরব থাকে প্রাণের প্যারিস রোড। ভালোবাসা-বন্ধুত্ব, আন্দোলন-সংগ্রাম, জীবন-মৃত্যু, হাসি-কান্না, একাকিত্ব সময় কিংবা প্রেমিকযুগলের হাতের উষ্ণ ছোঁয়া; যুগের পর যুগ ধরে এমন বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চির চেনা এই ‘প্যারিস রোড’।
আবার ক্যাম্পাসে আসা নব্য প্রেমিক যুগলদেরও প্রথম ভালবাসার অনুভূতির প্রকাশ ঘটে এ-ই প্যারিস রোডের শীতল ছায়ায় হাঁটার মধ্যদিয়েই। ‘প্যারিস রোড’ শুধু একটি রাস্তার নাম নয়; কালের ইতিহাস বহনকারী ঐতিহাসিক এক স্থানের নাম। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের সাক্ষী এ রাস্তাটি।
ছাত্রদের বিক্ষোভ, আন্দোলন যেমন প্যারিস রোড ছাড়া পূর্ণতা পায় না, তেমনি ক্যাম্পাসের ভালোবাসাও প্রাণ পায় না প্যারিস রোড ছাড়া। রাস্তার দু’ধারে গগন শীরিষ গাছে আচ্ছাদিত এ রাস্তা বহন করে চলেছে অনেক কালের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। কখনও বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছে তার বুক, কখনও ভালোবাসায় শীতল হয়েছে; আবার কখনও বা তাজা রক্তের সঙ্গে মিশেছে প্যারিসের চোখের জল।
যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসা বিভিন্ন উৎসবে বিচিত্র সাজে সজ্জিত শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মিলন কেন্দ্র এ-ই প্যারিস রোড। নবীন এবং প্রবীণ এমন কোন শিক্ষার্থী খুজে পাওয়া যাবে না, যার সঙ্গে প্যারিস রোডের কোন স্মৃতি জড়িয়ে নেই!! সকলের হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে গেছে চির চেনা এই প্যারিস রোডের একটুকরো স্মৃতি।
যেটা প্রতিনিয়তই তার কাছে টানে। কিন্তু সকল বিশেষত্বের মধ্যেও এই প্যারিস রোডের জন্মের ইতিহাস অনেকটা সাদামাটা। ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে সুদূর ফিলিপাইন থেকে এ-ই গগন শিরীষ গাছ গুলো আনা হয়। পরে ক্যাম্পাসের কাজলা গেট থেকে শেরেবাংলা হল পর্যন্ত এই গাছগুলো লাগান তৎকালীন উপাচার্য এম শামসুল হক।
যা পরবর্তীতে আন্দোলন, সংগ্রাম, ভালবাসা, সুখ-দুঃখ এবং সংস্কৃতির লীলাভূমিতে পরিণত হয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য স্বাক্ষর বহন করে চলেছে।