ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর সদরের ঝাওলা এলাকায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে একটি নুরানি মাদরাসা ও এতিমখানার মাঠ উঁচুকরণ প্রকল্পের জন্য কাবিখার বরাদ্দের ২৪ মেট্রিক টন গম বিক্রি করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গম আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও মাদরাসা কমিটির সদস্যরা। জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার বাঁশচড়া ইউনিয়নের ঝাওলা এলাকায় ঝাওলা নালিখালী নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানাটি স্থাপিত হয় ২০১৭ সালে।
স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের উদ্যোগে ও আর্থিক অনুদানে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হলেও মাদরাসা কমিটি বিগত দিনে মাদরাসার মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে কোন আবেদন করেননি। কিন্তু মাদারাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের খোকা স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: বিলাল উদ্দিনকে সভাপতি করে ঝাওলা নালিখালী নুরানি মাদরাসা ও এতিমখানার মাঠউচুকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করেন।
জামালপুর সদরের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো: মোজাফফর হোসেনের সুপারিশে সদর উপজেলা প্রশাসন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ওই মাদরাসার মাঠউঁচু করার জন্য ২৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়। গম বরাদ্দের বিষয়টি গোপন রেখে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের খোকার যোগসাজশে ইউপি সদস্য বিলাল উদ্দিন গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিনে কিছু মাটি কাটা শ্রমিক নিয়ে মাদরাসার পুরো মাঠজুড়ে সামান্য কিছু মাটি কেটে তার ওপর ঘাস লাগিয়ে দেন।
বিষয়টি মাদরাসা কমিটি ও স্থানীয়দের নজরে এলে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মাদরাসার নামে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ২৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন গত ৩৩ হাজার টাকা দরে ২৪ টন গমের মূল্য দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু মাঠে সামান্য পরিমাণ লোকদেখানো কিছু মাটি কেটে ছড়িয়ে দিয়ে গত জুন মাসের মধ্যেই বরাদ্দের সমুদয় গম উত্তোলন করে টাকা আত্মসাত করাকে কেন্দ্র করে মাদরাসা কমিটি ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: খায়রুল বাশার পিন্টু গম আত্মসাতের বিষয়ে সদরের ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে মাদরাসার নামে বরাদ্দের ২৪ মেট্রিক টন গম আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একইভাবে স্থানীয় জামিরা গ্রামের মো: আনোয়ার সাদাত জানতেন না যে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প কমিটিতে সম্পাদক হিসেবে তারও নাম রয়েছে।
কমিটিতে তার নাম দিয়ে ভুয়া স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিনিও সদরের ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে তার স্বাক্ষর জ্বালিয়াতির বিচারসহ মাদরাসার ২৪ মেট্রিক টন গম আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দে মাদরাসার উন্নয়ন কাজ হবে মাদরাসা কমিটি জানবে না, এটা তো হতে পারে না।
মঙ্গলবার স্থানীয় বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে মাদারসা কমিটির এক সাধারণ সভায় উপস্থিত সবাই মাদরাসার উন্নয়নের নামে ২৪ মেট্রিক টন গম আত্মসাতকারীদের বিচার দাবি করেছেন। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের খোকা গম আত্মসাত কনেননি বলে দাবি করে বলেন, ‘আমি বা এই প্রকল্প কমিটির একটি টাকাও আত্মসাত করিনি।
প্রকল্প কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য বিলাল উদ্দিনকে দিয়ে আমি মাদরাসা মাঠে মাটিভরাট কাজে ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে নালিখালী মাদরাসার মাটিভরাট প্রকল্প কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিলাল উদ্দিনকে প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী মাটি কেটে মাঠ উঁচু করে দেওয়ার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে না দিলে প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।