বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও নিভৃত গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ চালিয়ে গেলেও তা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত রয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন হারতা।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ইউনিয়নের অবস্থান। কৃষি পণ্য ও মৎস্য ব্যবসার জন্য সমৃদ্ধ হারতা বাজার উপজেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী-খুচরা পণ্য বেচাকেনার বাজার। তবে এখানকার মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম হচ্ছে চল্লিশ বছরের পুরনো হারতা-জল্লা আঞ্চলিক রাস্তাটি। প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ইট বিছানো রাস্তাটি এখন পুরোপুরি কাঁদা-মাটির রাস্তা।
মাঝে মধ্যে রাস্তাটির কোথাও কোথাও দু’একটি ইটের দেখা মেলে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবগত করলেও তাতে কোন সুফল হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হারতা থেকে জল্লা যাওয়ার ওই আঞ্চলিক রাস্তাটির ইট উঠে পুরো কাঁদা-মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে পুরো রাস্তাটি কাঁদা-পানিতে একাকার হয়ে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন এক সময় ইট বিছানো রাস্তা ছিল। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাস্তাটি ব্যবহার করে চলাচলকারী জল্লা ও হারতা ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এই রাস্তাটি নির্মাণ করে। নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকেই রাস্তাটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত কোন সংস্কার করা হয়নি। অথচ রাস্তাটি ব্যবহার করেই স্থানীয়রা যাতায়াতের পাশাপাশি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কৃষি পণ্য ও মৎস্য সম্পদ রাজধানী সহ জেলার বিভিন্নস্থানে পরিবহনযোগে সরবরাহ করে আসছেন।
সেক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরেই প্রতিনিয়ত তাদের পোহাতে হচ্ছে অন্তহীন ভোগান্তি। তাছাড়া রাস্তার এই দুরাবস্থার কারণে আশপাশের গ্রামগুলোর সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা শিশির বিক্রম জানিয়েছেন,সম্প্রতি বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. সাজিদুর রহমান সরদার সাতলা-বাগদা প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দীর্ঘদিনের চলাচল অযোগ্য রাস্তাটি দেখে হতবাক হয়ে যান।
এরপরই তিনি নিজেই রাস্তাটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে গত ১৪ জুলাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নিকট লিখিতভাবে আবেদন করেন। তবে ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে হারতা ইউপি চেয়ারম্যান ডাক্তার হরেন রায় জানান, ‘দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মিত ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় এলজিইডি দফতরে বহুবার আবেদন করা হলেও কোন সুফল হয়নি। গত চল্লিশ বছরে অনেক এমপি পরিবর্তন হলেও এখনও অপরিবর্তিত নিত্য দুর্দশার রাস্তাটি’।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী এ.কে.এম রেজাউল করিম বলেন, ‘রাস্তাটি দীর্ঘ বছর ধরেই চলাচলের অযোগ্য বলে শুনেছি। দ্রুত সংস্কারের জন্য চেষ্টা চলছে’।