দেশের খ্যাতিমান ভাস্কর মৃণাল হক আর নেই। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে গুলশানের বাসায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৫৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন দেশের খ্যাতিমান এই চিত্রশিল্পীর মৃণাল হক। ১৯৭৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।
১৯৮৪ সালে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সালে কর্মজীবন সম্পাদনায় তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান এবং সেখানে তার প্রথম কাজ শুরু করেন। নিউইয়ার্ক সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাসে তার প্রথম চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়।
তিনি নিউইয়ার্কে এত বেশি কাজ করেছিলেন যে, নিউইয়ার্কের সরকারি টিভি চ্যানেলে তার একটি সাক্ষাৎকার ২৬ বার এবং সিএনএন চ্যানেলে ১৮ বার প্রচারিত হয়েছিল। ২০০২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পী নিজ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করেন রকমারি ভাষ্কর্য।
২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার তারই শিল্পকর্ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জোহাচত্বের সামনে বিখ্যাত এই টাওয়ারটি অবস্থিত। চিত্রশিল্পী মৃণাল হকের উল্লেখযোগ্য কর্ম সম্পাদনার মধ্যে অন্যতম রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ‘দুর্জয়’ ভাস্কর্য।
এছাড়াও শাহবাগের “জননী ও গর্বিত বর্ণমালা”, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ‘রত্নদ্বীপ’, হোটেল শেরাটনের সামনে ‘রাজসিক’, ইস্কাটনে ‘কোতোয়াল’, সাতরাস্তায় ‘ময়ূর’, মতিঝিলের ‘বক’, এয়ারপোর্ট গোল চত্বরের ভাস্কর্য, নৌ সদর দপ্তরের সামনে ‘অতলান্তিকে বসতি’, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ভাস্কর্য, বঙ্গবাজারে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ভাস্কর্যের নির্মাতা তিনি।
বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম প্রমি বলেন, দেশ বরেণ্য ভাস্কর মৃণাল হকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারালো এক কিংবদন্তীকে। তার মৃত্যুতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
তিনি ছিলেন দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়া একজন মানুষ। তার নির্মিত চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যসমূহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে। তার হাতে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়(রাবি) ক্যাম্পাসের গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার আজও শিক্ষার্থীদের নজরকাঁড়ে।
তার তৈরী শিল্পকর্মে মাধ্যমেই চিরকাল অমর হয়ে রইবেন তিনি প্রতিটি শিল্পপ্রেমিক মানুষের অন্তরে। উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট দেশে বরেণ্য আরেক বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মর্তুজা বশীর মৃত্যু বরণ করেছেন। যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতি ছিলেন।