কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টায় ইউনিয়নের থাইংখালী স্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহবায়ক রবিউল হাসান রবি।
এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী, পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এমএ মঞ্জুর,অধ্যাপক ছৈয়দ নুর,এড. আবদুল মালেক,পালংখালী ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক কামাল উদ্দিন সওদাগর,যুগ্ন আহবায়ক ও অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আবদুল গফুর নান্নু,ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন,যুগ্ম আহবায়ক এতমিনানুল হক,এমএ ছাত্তার আজাদ,নুরুল আবছার সাজু,হুমায়ুন কায়সার মামুন,হেলাল উদ্দিন সহ কমিটির সদস্যরা।
বক্তারা বলেছেন,২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট থেকে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে লাখ-লাখ রোহিঙ্গা প্রান ভয়ে পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নেয়।মানবতার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় উখিয়া-টেকনাফে পুরনো এবং নতুন সহ মিলে ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গার আশ্রয় হয়েছে।রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে স্থানীয়রা নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই বসতভিটির জায়গা,চাষাবাদের জমি,ক্ষেত খামারের জমি হাত ছাড়া হয়েছে।শ্রম বাজার রোহিঙ্গার দখলে চলে গেছে।নিত্যপণ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে,পরিবহন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।বর্ধিত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রোহিঙ্গার কারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে,তাতে নাগরিক সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রোহিঙ্গা সংকটে উখিয়া- টেকনাফের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।তার মাঝে ১১ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থল পালংখালী ইউনিয়নে।মাত্র প্রায় ৫০ হাজার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বসবাসের জায়গায় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালংখালী ইউনিয়নে রয়েছে।
এত বিশাল রোহিঙ্গার চাপে স্থানীয়রা যেন আপনভুমে পরবাসী হয়ে রয়েছে।রোহিঙ্গার চাপে ক্ষতবিক্ষত স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা সাহায্য-সহায়তা এবং এনজিওতে চাকরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।স্থানীয়দের চাকরীতে নিয়োগের স্থলে বাইরের জেলার মানুষদের গোপনে নিয়োগ দিচ্ছে।
তিন বছর পরও স্থানীয়দের যোগ্যতা-পরিক্ষার কথা বলে যখন চাঁটাই করা হচ্ছে, বুঝতে বাকি থাকেনা যে স্থানীয়দের সাথে কিভাবপ প্রহসন করা হচ্ছে। সব কিছুর জন্য ভুক্তভোগী স্থানীয় জনগোষ্টি। অার প্রহসন করা হচ্ছে স্থানীয়দের সাথে।পাহাড় ধ্বংস,বনভুমি ধ্বংস,অক্সিজেন সংকট,কার্বনডাইঅক্সাইডের অভাব, রাস্তাঘাট নষ্ট,সামাজিক অবক্ষয়,এইডস,ডিপথেরিয়া সহ নানা রোগ ব্যাধিতে স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছে,চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি,এবং অাইনশংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি সহ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রাএনজিওর বড় কর্তারা তাদের কে চাকরিচ্যুত করে নিজেদের পছন্দের অাত্বীয়স্বজনদের চাকরিতে নিয়ে অাসছে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৭ দফা দাবী বাস্তবায়ন চেয়ে বলেছেন ইউএন( জাতিসংঘ) অর্গানাইজেশন বা এনজিওগুলো তাদের বাজেটে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০% বরাদ্দ রাখার ঘোষণা থাকলেও,তা বাস্তবায়ন করছেনা,এনজিওতে চাকরীর ক্ষেত্রে স্থানীয়দের ৭০% কৌটা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা,নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে জেলা প্রশাসনের সাথে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্ধয় করা জরুরী বলে মনে করেন তাঁরা।রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য এনজিওদের উৎসাহ বাড়াতে হবে।
এনজিওতে স্থানীয়দের নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় কৌটা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করে স্থানীয় ম্যাপ অনুসরণ করতে হবে। চাকরীর ক্ষেত্রে সকল এনজিও অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।পালংখালী ইউনিয়ন বাসীর ন্যায্য নাগরিক সুবিধা দানের লক্ষ্যে আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ এবং রোগী বহনে ২৪ ঘন্টা ফ্রি এম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উত্থাপিত দাবী সমুহ বাস্তবায়নে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরো সহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রেরণ করেছে।এসব দাবী বাস্তবায়নে ব্যতয় ঘটলে অভিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা তরাম্বিত করার জোর দাবী তুলেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা।এতে সহস্রাধিক বিভিন্ন শ্রেনীপেশার ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
এসময় পালংখালী ইউপির সদস্য, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, পেশাজীবি ছাড়াও,সাবেক মেম্বার শেখ হাবিবুর রহমান,আবদুর রহিম রাজা,মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পালংখালী ইউপির ৫ বারের সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা শেখ হাবিবুর রহমান দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেছেন,২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলে আমার ২৫ একরের ৩ টি মৎস্য ঘের,সাড়ে ৭ একরের সামাজিক বনায়ন রোহিঙ্গার দখলে চলে গেছে।চাষাবাদের জায়গা হারিয়েছি।এখন জীবন জিবীকা নির্বাহ করতে গিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছি।
হয়তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন জিবীকা ফিরিয়ে দেওয়া হউক,অন্যথায় অবশিষ্ট জায়গা,জমি,ঘর-বাড়ি সরকারের অনুকুলে নিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে শরণার্থী বানানো হউক,এমনটাই ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেন।তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীননতা যুদ্ধের সময় ১৭ বছরের টগবগে যুবক।খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করে মুক্তিবাহিনীর পাশে দাড়িয়েছিলেন বলেও জানান।