ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা সদর ৫ কিলোমিটার দূরে গোবরাকুড়া ও ৬ কিলোমিটার দূরে কড়ইতলী অবস্থিত স্থলবন্দর দুটি ১৯৮৯ ও ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুটি বন্দর দিয়ে শুধু কয়লা আমদানি-রপ্তানি হতো। সরকারি হিসেবে দুটি বন্দরে ৮ শ আমদানি-রপ্তানিকারক ও ৬ হাজার শ্রমিক রয়েছে।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক নেতারা জানান, ভারতের মেঘালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন (ডিমাহাসাও) জেলা ছাত্র ইউনিয়নের মামলার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল সে দেশের ন্যাশনাল গ্রি ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) আদালত মেঘালয় সরকারকে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা খনন ও পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয়।
আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে মাঝে মাঝে কয়লা আমদানি-রপ্তানি চলে আবার তা দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই ৫ থেকে ৬ বছর ধরে চলছে কয়লা আমদানি কার্যক্রম। ফলে একরকম স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দর দুটি। বন্দর দুটির রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৭৪ হাজার ১ শ টাকা।
আগে বন্দরে ভারতীয় কয়লা যখন আসত তখন রাজস্ব ৬০ কোটি টাকার ওপর আদায় হতো। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় নেই বললেই চলে। ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে আনষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
স্থলবন্দর ঘোষণা হওয়ার দীর্ঘদিনেও বন্দর দুটিতে স্থায়ী অবকাঠামো, ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা, ওজন মাপার যন্ত্রসহ কিছুই করা হয়নি। ফলে কয়লা ও পাথর ছাড়া এ বন্দর দিয়ে অন্য কোনো মালামাল আমদানি-রপ্তানি হয় না এমনটাই বলছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। এই স্থলবন্দরটি জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজের জন্য সরকার ৬৭ কোটি ২২ লাখ বরাদ্ধ করে।
জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় উন্নয়ন কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলছেন স্থলবন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। স্থলবন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ায় সেখানে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে।
কড়ইতলী স্থলবন্দরে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষপর্যায়ে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে সেখানে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। গোবরাকুড়া-কড়ইতলী’ উন্নয়ন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. হাসান আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা গত ৫ মাস কোনো কাজই করতে পারিনি। বর্তমানে গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে বাউন্ডারি ওয়াল ও ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ চলছে।
পর্যায়ক্রমে স্থলবন্দর দুটিতে মালামাল সংরক্ষণের জন্য ওয়ার হাউজ, ভারত থেকে আসা গাড়িগুলো রাখার জন্য পার্কিং ইয়ার্ড, বন্দরে বিভিন্ন দপ্তরের অফিস ভবন, সিকিউরিটি গার্ডদের জন্য ব্যারাক ভবন, ডরমিটরি ভবন, ১০০ মেট্রিকটন ওজন স্কেল মেশিনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।
হালুয়াঘাট স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাসুদ করিম বলেন, ব্যবসায়ীরা বর্তমানে খুবই কষ্টে রয়েছে। এই দুটি বন্দরের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী কয়লা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ভারতীয় জটিলতা ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সকলেই দিশেহারা।
ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) আটকে আছে। কয়লা আমদানি বন্ধ থাকা সত্যেও প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে সুদ দিতে হচ্ছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমানে যেহেতু স্থলবন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে তাই আমরা অন্ধকারের মাঝেও আশার আলো দেখছি।
কড়ইতলী কোল অ্যান্ড কোক ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চেয়ারম্যান এম সুরুজ মিয়া বলেন, এখানকার বেশির ভাগ ব্যবসায়ী কয়লা আমদানি-রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরের কার্যক্রম চালু হলে এখানে পচনশীল মালামালসহ ১৩ ধরনের জিনিস আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। ফলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, স্থলবন্দর দুটির উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান আছে। এর মধ্যেই কড়ইতলী স্থলবন্দরের জন্য ১৪ একর ৭৩ শতক জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের জন্য ১৬ একর ৪১ শতক জায়গা অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে এবং অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুত কাজগুলো শেষ হবে।
বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলেন, পূর্ণাঙ্গ বন্দর চালু হলে এখান থেকে যেমন ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে তেমনি সরকার পাবে কোটি টাকার রাজস্ব।