সরকারি বিধি অনুযায়ী এক অফিসে তিন বছরের বেশি না থাকার কথা বলা হলেও এই কর্মকর্তা সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১২ জন ভুক্তভোগী এরই মধ্যে নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরবার লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নার্গিস আক্তার ২০১৩ সালে মনোহরদী উপজেলায় যোগ দেন। এরপর থেকে তাঁর নানা অনিয়মের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। তা ছাড়া অফিস সহায়ক (পিয়ন) রিয়াজ উদ্দিন প্রায় দুই যুগ ধরে এই অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মকর্তা এবং পিয়ন মিলে দুর্নীতি করেন।
ভূক্তভোগী শাহনাজ পারভিন মিতু জানান, তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ছয় হাজার ৩০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি-মার্চ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা জোর করে রেখে দিয়েছেন নার্গিস আক্তার। টাকা কম দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সবাইকে গালাগাল করেন এবং হয়রানির ভয় দেখান।
তাত্ক্ষণিকভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া একই প্রশিক্ষণে রুমা, নাছিমা ও তাছলিমার ভুয়া নাম বসিয়ে ভাতা তুলেছেন কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান, সেলাই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে আসা নারীদের কাঁথা সেলাই করতে বাধ্য করেন নার্গিস আক্তার। পরে এসব কাঁথা ঢাকায় নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করে তিনি টাকা হাতিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুুক মহিলা সমিতির এক নেত্রী জানান, প্রতিবছর মহিলা সমিতির নামে সরকার অনুদান দিয়ে থাকে। এসব অনুদানের চেক উত্তোলন করতে গেলে চার-পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয় কর্তকর্তাকে। টাকা কম দিলে সদস্যদের গালাগাল করেন। তা ছাড়া নতুন সমিতির নিবন্ধন করতে চাইলে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয় এই কর্মকর্তাকে।
অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আসবাব কেনার জন্য দুই লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।সেখানে ৬০-৭০ হাজার টাকার মালামাল কিনে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন কর্মকর্তা।
তা ছাড়া গত শোক দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও তা আত্মসাৎ করেছেন। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করার কারণ জানতে চাইলে এই দিবস পালনের প্রয়োজন নেই বলে তাদের জানানো হয়।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
নরসিংদী জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সেলিনা আক্তার বলেন, ‘মনোহরদী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া এরই মধ্যে ওই অফিসের একজন অফিস সহকারী এবং একজন অফিস সহায়ককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
কালেরকন্ঠ//