মাত্র এক মাস ৪ দিনের ব্যবধানে নেত্রকোনায় দুই নৌ-দুর্ঘটনায় ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১২ জন। সর্বশেষ বুধবার কলমাকান্দার গুমাই নদীতে ট্রলারডুবিতে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ৫ আগস্ট জেলার মদনে ট্রলারডুবির ঘটনার ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।নেত্রকোনার কলমাকান্দার গুমাই নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে নেমেছে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ। পাশাপাশি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের এডিএম মাহমুদুল হাসানকে প্রধান করে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নৌকার বেঁচে যাওয়া যাত্রী মধ্যনগরের মাছ ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, একজন যাত্রী নদীর পাড় থেকে ডাক দেয়ায় হঠাৎ করে তাদের বহনকারী ট্রলারটি ঘুরিয়ে ফেলে। এ সময় বালুবাহী ট্রলারটি ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রলারটি মুহূর্তের মধ্যে উল্টে যায়। আমি কোনোভাবে জানালা দিয়ে বের হয়ে আসি।
বেঁচে যাওয়া অপর যাত্রী সুনামগঞ্জের ইনাতনগর গ্রামের ওয়াহাব আলী বলেন, একই নৌকায় আমার দুই সন্তান ও স্ত্রী ছিল। হঠাৎ নৌকাটিকে পেছন থেকে বালুবোঝাই একটি নৌকা ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। চোখের সামনে মুহূর্তেই ছেলেমেয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলি। নিজে জানালা দিয়ে বের হয়ে আসি। তীরে উঠে দেখি কেউ নেই! স্ত্রী সন্তান কেউ নেই। এভাবেই পরিবারের লোকজনকে হারিয়ে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন ওয়াহাব আলী।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বুধবার সন্ধ্যায় নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। নিহতদের মধ্যে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের মধ্যনগরের নারী, শিশুসহ ১০ জন রয়েছেন। এ ঘটনায় বালুবোঝাই ট্রলারের মাঝিসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার কলমাকান্দা থানার ওসি মো. মাজহারুল করিম জানান, এ ঘটনায় দুই সন্তান ও স্ত্রী মারা যাওয়ায় কলমাকান্দা উপজেলার ইনাতনগরের ওয়াহাব আলী বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় বালীবাহী নৌকার মাঝিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী ট্রলারডুবির ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পুলিশ এলাকাবাসীকে নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের এডিএম মাহমুদুল হাসানকে প্রধান করে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সদরের একজনের জন্য ২০ হাজার ও সুনামগঞ্জের নিহতদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএর একটি ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী এলাকায় আনন্দ ভ্রমণে আসা ৪৮ পর্যটক নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। ৩০ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অন্যরা উঠতে পারেননি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করে। পর দিন ৬ আগস্ট সকালে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।