রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালগামী ওই লঞ্চটির তৃতীয় তলার ৩৯১ নম্বর কেবিনে রোববার রাতে যেকোন এক সময় নারীকে হত্যা করা হয়। সোমবার সকালে চল্লিশোর্ধ্ব নারীর লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠায় নৌ-পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এ বিয়োগান্তের ঘটনাটি স্বাভাবিকভাবে নিলেও কয়েক ঘন্টার মাথায় লঞ্চের সিটিটিভির ফুটেজ পরীক্ষায় বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সেখানে দেখা যায়, পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সি এক পুরুষের সাথে নারী লঞ্চে ওঠেন এবং কেবিনে প্রবেশ করেন। ফলে পুলিশ নিশ্চিত হয় নারীকে রাতে ধর্ষণ শেষে ওই ব্যক্তি হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তাছাড়া শেবাচিমের চিকিৎসকরাও নারীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পেয়েছে।
নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে এরুপ তথ্য নিশ্চিত হয়ে বরিশাল পুলিশ ওই দিন কেবিনে থাকা ব্যক্তিসহ নারীর পরিচয় খুঁজতে শুরু করে। পুলিশ জানায়, হত্যাকারী তার মিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করে অনেকটা নিরাপদে লঞ্চ ত্যাগ করে।
সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি নিজেকে কামরুল পরিচয় দিয়ে লঞ্চের কেবিন বুকিং করা ছাড়াও ভুয়া একটি মোবাইল নম্বার দিয়েছে। সেই নম্বারে যোগাযোগ করলে অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি রিসিভ করে কুমিল্লায় অবস্থানের কথা জানান। এবং ওই ব্যক্তি বরিশালে কোনদিও আসেনি বলে দাবি করেন। অবশ্য পুলিশও বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত হয়, এই ব্যক্তি আসলেই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন এবং ঘাতক কথিত কামরুল নিজেকে রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে এমন কৌশল নিয়েছে।
বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, টিকিট বুকিং অনুযায়ী কামরুল নামের ওই ব্যক্তি ছদ্মবেশ ধারণ করে লঞ্চের কেবিনে ওঠে এবং কিলিংমিশন বাস্তবায়ন করে পালিয়ে গেলেও সিসি টিভির ফুটেজে সে ধরা পড়েছে। কিন্তু সেখানেও সে কৌশল নিয়েছে। লঞ্চে প্রবেশ এবং মিশন বাস্তবায়ন করে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় মাক্স পরিহিত ছিল। পুলিশ এখন ওই কথিত কামরুলকে হন্য হয়ে খোঁজার পাশাপাশি মাঝবয়সী নারীর পরিচয় নিশ্চিত হতে তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সারাদেশের থানাগুলোতে ঘাতকসহ নিহত নারীর ছবি পাঠিয়ে সনাক্তকরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বরিশাল সদর নৌ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অলোক চৌধুরী বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এবং নিহত নারীর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ শেবাচিমে মর্গে রাখা হয়েছে।
কোতয়ালি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, এই হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতারে তাদের দুটি চৌকশ টিম সোমবার দুপুরেই মাঠে নেমেছে। পুলিশের ধারণা অজ্ঞাত ওই নারী রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে লঞ্চের কেবিনে এনে তাকে ধর্ষণ শেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কথিত ওই কামরুল।
পুলিশ এখন কামরুলকে গ্রেফতারসহ নারীর পরিচয় সনাক্তে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এমন তথ্য দিয়ে বরিশাল সদর নৌ-থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নারীর লাশ উদ্ধারের খবরে রাজধানী ঢাকা থেকে এক ব্যক্তি টেলিফোনে যোগাযোগ করেছেন। তিনি মঙ্গলবার সকালে সড়ক পথে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।