তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকে গত রোববার পর্যন্ত উপজেলায় মাত্র ২৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৭ জন। তাঁদের কেউ মারা না গেলেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বেড়ায় এ পর্যন্ত মোট দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন উপজেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন।
আবার কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘উপজেলায় সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০ রোগী আসছেন।
এসব রোগীর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধে ভালো হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া আমরা লক্ষ করছি, অনেক রোগীরই উচ্চ তাপমাত্রা, অর্থাৎ ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ ওষুধে তিন থেকে চার দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। গতকাল বেড়া পৌর এলাকার একটি বাড়িতে কাজ করছিলেন এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তিনি জানান, তিন দিন আগে তাঁর জ্বর আসে।
এতে বাজারের একটি ফার্মেসিতে গিয়ে উপসর্গের কথা বলে অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামলসহ আরও কয়েকটি ওষুধ কিনে খেয়েছেন। এখন আর জ্বর নেই। তবে শরীর খুব দুর্বল। এদিকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকেরা। বেড়ার ৪ থেকে ৫ টি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তাঁরা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। যা অবস্থা, তাতে মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশির ভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাঁদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক বিড়ম্বনাসহ নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা ও আস্থাহীনতার কারণে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত তেমন কেউ করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মনে করছেন, করোনা হোক আর সাধারণ জ্বর হোক, তা সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাবে। এ ছাড়া এর আগে নমুনা দেওয়ার পর অনেকেই ৮ থেকে ১০ দিন বা তারও বেশি সময় পর পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। কিন্তু তত দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলেও পজিটিভ হওয়ার কারণে পরিবারসহ লকডাউনে যেতে হয় তাঁদের। তাঁদের কেউ কেউ সামাজিক হেনস্তার শিকারও হন।
এ কারণে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই করোনা পরীক্ষায় নেই আগ্রহ।
বেড়া পৌর এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিজীবী জানান, ৬-৭ দিন ধরে তিনিসহ তাঁর পরিবারের সবারই জ্বর-কাশি চলছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি কেউ। এ অবস্থায় ঝামেলা ও বিড়ম্বনার ভয়ে করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও বলেন, ‘আমরা নমুনা সংগ্রহ করার পর পাবনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠাই। সেখান থেকে রাজশাহী বা ঢাকার ল্যাবে পাঠানোর পর নমুনার রেজাল্ট আসতে সাত-আট দিন লেগে যায়। ফলে জ্বর-কাশির উপসর্গ থাকা রোগীদের করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ কম। এরপরও অনেকেই নমুনা দিতে আসছেন। তবে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রয়োজনে আসা লোকজনই বেশি।