১৯৯৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী (সাবেক রাষ্ট্রপতি) জিল্লুর রহমান সাঁথিয়া পৌরসভার উদ্বোধন করেন। ২৫ দশমিক ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪১হাজার ৪শ’ ২ জন মানুষের জনসংখ্যা। পুরুষ ২১১৮৩ এবং মহিলা ২০২১৯ জন। এই পৌরসভার ২৬ টি মৌজা ২৭ টি গ্রাম এ পৌরসভাকে শহর বলা যায় না।
গ্রামীণ পরিবেশে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় রাতে সড়কে আলো জ্বলে না। ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪শ’ ৯৩ টাকার বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়ে থাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। দুই বছর ধরে আলো বিহীন পৌর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলছে ভুতুড়ে পরিবেশ। যদিও খাতাপত্রে দেখানো হয়েছে পৌরসভা এলাকার ১০ কিলোমিটার সড়কে আলো আছে! ৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গত ৪১ মাস বেতন পান না।
মাস্টার রোলে কর্মরত ১০ জন কর্মচারীরও একই হাল। নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন নিয়মিত অফিস করেন না। থাকেন না সাঁথিয়ায়। দুই বছর সচিবের পদ শূন্য রয়েছে। পৌরসভার ২০০৬ সালে জনতা ব্যাংক বেড়া শাখায় ফিক্সড ডিপোজিট ছিল ৫৫ লাখ টাকা। এই টাকা ট্রান্সফার করে নিয়ে আসা হয় সাঁথিয়া সোনালী ব্যাংকে। সেই টাকা উধাও হয়ে গেছে বা খরচ হয়ে গেছে! ফিক্সড ডিপোজিটের অর্থ নিয়ে দুদকের তদন্ত চলছে।
পৌরসভায় রাজস্ব খাতে বছরে আয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু এ আয়ের টাকা যথাযথ ভাবে জমা এবং খরচের অভিযোগ ও দীর্ঘদিনের। পৌরসভার ৪টি ট্রাক, ২টি রোলার মেশিন, একটি সার্ভিস ট্রাক এবং একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ যে আয় হয় তার ও কোন খবর নেই। পৌরসভার ট্রাক বালু-ইট পরিবহনে ভাড়া খাটানো হয়। প্রতি ট্রাকে মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এ হিসাবে ৪টি ট্রাকের ভাড়া বাবদ বছরে ৩০ লাখ টাকা আয় হবার কথা থাকলেও কোন টাকা পৌর কোষাগারে জমা নেই।
রোলার এবং এ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকাও জমা হয় না। জন্ম নিবন্ধন ফি আদায় হলেও তা পৌরসভার তহবিলে জমা হচ্ছে না। অটোরিক্সা ও ভ্যানের লাইসেন্স পৌরসভা থেকে প্রদান করা হয় না। যদিও পৌর এলাকায় প্রতিদিন এসব যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এই আদায়কৃত টাকা কার পকেটে যায় এ প্রশ্ন এখন জনমনে।
পৌর বোয়াইলমারী বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু মার্কেট’ নির্মাণ করা হয়েছে খাস জমিতে। মার্কেটের প্রতিটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায়। এই টাকা কোন খাতে জমা হয়েছে তারও কোন হদিস নেই। একই অবস্থা বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণের তাঁতি বাজারের।
পৌরসভার সামনের তিনটি দোকান ভাড়া বা লিজ প্রদান করা হয়েছে কিভাবে কত টাকায় তারও কোন স্বচ্ছতা নেই। পৌরসভার সড়কগুলো চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। পাকা সড়কের চেয়ে সাঁথিয়া পৌরসভায় কাঁচা সড়কের পরিমাণ বেশি। পাকা সড়ক ৩৮ দশমিক শূন্য ২ কিলোমিটার। ইট বিছানো সড়ক ১২ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ৪৯ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার।
একই সড়ক বারবার মেরামত দেখিয়ে টাকা খরচ দেখানোর অভিযোগও আছে। পৌর এলাকায় সম্প্রতি ৪০টি তারা নলকূপ স্থাপন করার প্রকল্পেও নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। পানিতে প্রচুর আয়রণ থাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চলমান। বার্ষিক উন্নয়ন খাতে (এডিপি) সরকার ২০১৯-২০ সালে ৮৫ লাখ টাকা পৌরসভায় প্রদান করেছে।
১০ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তার ৯টির টেন্ডার হয়েছে। এইসব কাজের খতিয়ান পাওয়া যায়নি। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন অকপটে স্বীকার করলেন কর্মচারীরা বেতন পান না। সবকিছুর অনিয়মে এভাবে একটি পৌরসভা চলতে পারে না।
পৌর মেয়র মিরাজুল ইসলাম কর্মচারীদের বেতন বাকির কথা স্বীকার করে বলেন বিদ্যুৎ বিল ও ফিক্সড ডিপোজিট কিছু কিছু জমা দেয়া হচ্ছে তবে অন্য অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।