সীমান্তপথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় সীমান্তবর্তী সাধুরবাজার এলাকা থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার স্বদেশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইরাদ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ আবদুল কাদির মণ্ডল (৬৫) হত্যা মামলার আসামি এই চেয়ারম্যানকে ময়মনসিংহ আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে।
অভিযোগ, গত বুধবার বিকেলে স্বদেশী ইউনিয়নের গাজীপুর এলাকায় কংস নদের বালু দলবল নিয়ে দখল করতে যায় চেয়ারম্যান ইরাদ। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে আবদুল কাদির মণ্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করে ইরাদ ও তার লোকজন। এ ঘটনায় নিহত কাদির মণ্ডলের ছেলে ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। এতে চেয়ারম্যান ইরাদসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
স্বদেশী গ্রামের আবু সাইদ সিদ্দিকীর ছেলে মো. ইরাদ হোসেন সিদ্দিকী গত ইউপি নির্বাচনে স্বদেশী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ইরাদ বাহিনী নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলার।
গ্রেপ্তার ইরাদ চেয়ারম্যানের দুই সহযোগীর মধ্যে রয়েছে- বালিজুড়ি গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে সোহেল মিয়া ও ফুলপুর উপজেলার স্বর্ণচুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শাহজাহান মিয়া।
স্থানীয়রা জানান, ইরাদের উত্থান হয় ২০১৩ সালের দিকে। তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিল্লাল হক রানাকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইরাদ ও আরও কয়েকজন মিলে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। এরপর তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়েও মামলা রয়েছে ইরাদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর মাটিকাটা গ্রামের যুবক রাজন মিয়ার পা কেটে নেয় ইরাদ ও তার লোকজন। পরদিন ২৬ অক্টোবর ফুলপুর উপজেলা সীমান্ত থেকে ৫৩ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয় সে ও তার চার সহযোগী। গত বছরের ৫ এপ্রিল একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ইরাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ।
সে সময় হালুয়াঘাট থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল চন্দ্র ধর,সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই ঘটনায় থানার তৎকালীন এসআই মো. শামসুর রহমান সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
হালুয়াঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিল্লাল হক রানা জানান, ইরাদ সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল না। তার ওপর হামলা চালানোর মধ্যে দিয়ে উত্থান ঘটে ইরাদের। অপরাধীর সঠিক বিচার না হলে অন্যরা ভয় পাবে না। তাই ইরাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
স্বদেশী ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবু নাসের সরকার বলেন, এলাকার উঠতি তরুণদের মাদকসেবী বানিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাহিনী গড়ে ইরাদ নানা অপকর্ম চালাচ্ছেন। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও কয়েকদিনের মধ্যে জামিন পেয়েছেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকায় ইউপি চেয়ারম্যান ইরাদ হোসেন সিদ্দিকীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বালুকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধকে হত্যার ঘটনাটি ঘটে। সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় চেয়ারম্যান ও দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এর আগেও অন্তত ছয়টি মামলা ও চারটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।