বরিশালের বানারীপাড়ায় যৌতুকের দাবিতে তিন বছরের শিশু পুত্রের সামনে মায়ের পায়ের রগ কাটার ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৪ অক্টোবর রবিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে আহত ওই গৃহবধু হ্যাপীর পিতা আঃ রাজ্জাক হাওলাদার বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন ওই গৃহবধুর স্বামী রাসেল (৩২) শ্বশুর হাসান বালী (৬৫),শাশুড়ী খাদিজা বেগম(৫৫) ও চাচাতো দেবর জসিম(৩০)।
এদের মধ্যে মামলা দায়েরের পরে ওই দিন গভীর রাতে সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামী জসিমকে (৩০) গ্রেফতার করে । ৫ অক্টোবর সোমবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়। প্রসঙ্গত ৩ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ হ্যাপী তিন বছরের শিশু সন্তান রাতুলকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বানারীপাড়া পৌর শহরের হাইস্কুল সংলগ্ন দুলাল বালীর বাড়ির সামনের রাস্তায় রিক্সার গতিরোধ করে তার স্বামী রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী।
তারা তিন বছরের শিশু পুত্র রাতুলের চোখের সামনে হ্যাপীকে টেনেহিচড়ে নামিয়ে বেদম মারধর করে । এক পর্যায়ে শ্বশুর হাসান বালী তাকে জাপটে ধরে রাখে এবং স্বামী রাসেল ধারালো চাকু দিয়ে তার বাম পায়ের রগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এসময় হ্যাপী ও তার শিশু পুত্রের আর্তচিৎকারে পথচারিরা জড়ো হলে তারা আহত মায়ের কোল থেকে রাতুলকে ছিনিয়ে নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা হ্যাপীকে উদ্ধার করে প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে হ্যাপীর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।
বর্তমানে সে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। উল্লেখ্য উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার গ্রামের হাওড়াবাড়ি এলাকার হাসান বালীর ছেলে ধান ব্যবসায়ী রাসেল’র সঙ্গে একই এলাকার আ.রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে হ্যাপীর ১০ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
তাদের সংসারে রিমি (৯) ও রাতুল ( ৩) নামের দু’টি সন্তান রয়েছে। আহত হ্যাপীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে তিন লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে হ্যাপীকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলো রাসেল।
স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে হ্যাপী তার স্বর্নালঙ্কার বন্ধক রেখে ৩৬ হাজার টাকা দিলেও বাকী টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। হ্যাপী জরায়ু সমস্যার কারনে চিকিৎসা করানোর জন্য স্বামী রাসেলকে বার বার অনুরোধ করার পরে ২ অক্টোবর শুক্রবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে শুধু আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন রাতে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতর হ্যাপী উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বামীকে অনুরোধ করার পরেও সে চিকিৎসা করাতে অস্বীকৃতি জানায়।
এসময় বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে চিকিৎসা করাতে বলায় এ নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ৩ অক্টোবর শনিবার সকালে সে শিশু পুত্রকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রওনা হলে তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার পিছু নেয় স্বামী রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী।
এরপর প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু পুত্রের সামনে মায়ের রগ কাটার মধ্যযুগীয় বর্বরতার এ ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন জানান বাকী আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।