শালতা নদী সাতক্ষীরার তালা ও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সীমানা দিয়ে প্রবাহিত। শালতা নদীর দু-পাড়ের মানুষের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরাশনের লক্ষে বর্তমান সরকার শালতা নদী খননে পশ্চিম শালতা নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে১৩ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন খুলনার এস কে ই (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান।
এলাকাবাসি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির ও নদী খননে লুটপাটে অভিযোগ করনে। তবে খননের নামে লুটপাট হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের পাক্ষিক অগ্রগতির প্রতিবেদনে প্রকল্পের কাজের ৯৪ ভাগ কাজ শেষ দেখানো হয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, খুব দ্রæত শেষ হয়ে যাবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী।
তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৯৪ ভাগ কাজ শেষ দেখালেও বাস্তবতায় তার কোনো মিল নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মাগুরখালী,তালতলা,হেতালবুনিয়া,মাছিয়াড়া,মুনশিরাবা,বৈঠাহারা,কাঠবুনিয়া,মুড়–বুনিয়া, চাড়িভাঙ্গা, গøাবদাহ এলাকায় ঘুরে দেখাগেল ভিন্নচিত্র।ঠিকাদারী প্রতিষ্টান তাদের ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন।নদী খনন করে নদী তীরে রাখা হয়েছে মাটি। আবার অনেক স্থানে এখনো খনন হয়নি।আবার অনেক স্থানে খনন হলেও নদীর একপাশ দিয়ে খনন করা হয়েছে।অবার সামান্য বৃষ্টিতেই নদী তীরে মাটি ধূয়ে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শালতা খননের সময়ে নদীতে বাঁধ দেওয়ার কথা না থাকলেও ঠিকাদার বাঁধ দিয়ে নদী খনন করছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে মাগুরখালি ও খলিলনগর ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া পানি সরবরাহ না হওয়ায় নদী তীরের মৎস্য ঘের মালিকরা পড়েছে বিপাকে।এছাড়া নদীর সাথে সংযোগ খালের কোনো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর দপ্তর সূত্র জানাযায়, পশ্চিম শালতা নদী খনন নামে প্রকল্পের আওতায় ১৩ কিলোমিটার খননে ১৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে খুলনার এস কে ই (জেভি) ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাথে চুক্তিপত্র হয়। পশ্চিম শালতা নদী খনন ২১ মার্চ ২০১৯ থেকে কাজ শুরু করে ২৫ জুন ২০২০ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়কারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ালেও এখনো পর্যন্ত শেষ হয়নি নদী খনন।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী নদীর উপরে অংশে ৩২ মিটার (চওড়া), তলদেশ ১৫ মিটার ,গভীরতা সাড়ে তিন মিটার করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে যেনতেন খনন কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। শালতা খননের সময়ে নদীতে (ক্রসড্যাম) বাঁধ দেওয়ার কথা না থাকলেও ঠিকাদার বাঁধ দিয়ে নদী খনন করছে। ক্রসড্যামের বাঁধ দিয়ে পানির মধ্যে নাম মাত্র খনন কাজ করা হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে এখনও খনন করা হয়নি।
এবিষয়ে মাগুরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা কালের কণ্ঠকে জানান, নদী খননে ব্যপক অনিয়ম হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্টান তাদের ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন। নদী খননের সময়ে নদীর মধ্যে বাঁধ দেওয়ায় তার ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়।
এছাড়া শালতা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু পদ মন্ডল জানান, নদী খননের নামে লুটপাট করা হচ্ছে। কোথাও নদীর একপাশে খনন করা হয়েছে। কোথায়ও এখনো খননই করা হয়নি।তাছাড়া নদীর মাঝখানে গভীরতা খুবই কম।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, টিআএম প্রকল্প চালু না করলে নদী খনন করে লাভ হবে না। আজ খনন করলে কাল পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাবে খননকৃত নদী। পলি ব্যবস্থাপনার জন্য খনন প্রকল্পের সাথে টিআরএম চালু করতে হবে।
তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রনব ঘোষ বাবলু জানান, খননের নামে লুটপাট করার কারণে তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে মানবতার জীবন-যাপন করেছে। তখনও কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। খননে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি হলেও সংশ্লিষ্ট দপÍর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এব্যপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এসকেই (জেভি) এর মালিক শামিম আহম্মেদ বলেন, তিনি কাজে কোনো অনিয়ম করেননি। যদি খননে কোনো রকম অনিয়ম হয়, সেটা ঠিক করে দিবো।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তাদের কাজ চলমান আছে। যদি খননে কোনো রকম ত্রæটি হয় তাহলে ঠিক করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরশাফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ৯৪ ভাগ শেষ হয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, খুব দ্রæত শেষ হয়ে যাবে। নদী খননের দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে প্রকল্প এলাকায় টিআরএম ব্যবস্থা চালু প্রয়োজন, এব্যপারে তিনি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে অবিহিত করবেন বলেও জানান তিনি।