অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া দুই বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে নিজেদের বাড়ির পাশের দিনমজুরের কিশোরী কন্যাকে (১৪)। ঘটনাটি নিয়ে সালিস-দরবার, দফায় দফায় মীমাংসার চেষ্টা হলেও কিশোরী সন্তান সম্ভাবা হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সর্বশেষ সালিসে সন্তান নষ্ট করে কিশোরীকে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্তে ঘটনাটি জানাজানির পর পুলিশ কিশোরিকে উদ্ধার করে মামলা নেয়। এর মধ্যে ধর্ষিতা কিশোরী সন্তান জন্ম দিলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে অভিযুক্তরা।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) আদালতে দাখিলের পর অভিযুক্ত দুই তরুণ জামিনে আসলে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় ধর্ষিতার পরিবারকে। এ দিকে ধর্ষিতার ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান ধর্ষকদের সামনেই বড় হচ্ছে নানা অপবাদে। প্রতিনিয়তই ‘নষ্টা মেয়ে’ ডাক শুনতে হচ্ছে ধর্ষিতাকে। ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া গ্রামের।
স্থানীয় সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ওই গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে মোবারক হোসেন (১৬) ও মো. আকরাম হোসেনের ছেলে রাকিব মিয়া (১৬) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেলিতে পড়ে। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে দুজনে মিলে নিজেদের বাড়ির পাশের এক দিনমজুরের মেয়েকে জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য মেরে ফেলার হুমকি দেয় ধর্ষকরা। এর মধ্যে বেশ কয়েক দিন দুজনে মিলে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে।
একপর্যায়ে মেয়েটির শরীর খারাপের দিকে যেতে থাকলে পরিবারের লোকজন ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার দাবি করে। মাতব্বরা ঘটনাটি নিয়ে সালিসে বসলেও চাহিদামতো অর্থ না দেওয়ায় সিদ্ধান্তে কালক্ষেপণ হয়। আর এর মধ্যেই মেয়েটি শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। মেয়েটির অন্তঃসত্ত্বার বয়স আট মাস হলে তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদের জেরে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল দুই ধর্ষক ছাড়াও আট মাতব্বরকে অভিযুক্ত করে মামলা নেয় পুলিশ। এর মধ্যে আটজন কারাগারে গিয়ে জামিনে মুক্ত হয়। অন্যদিকে দুই ধর্ষক থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে ধর্ষিতা জন্ম দেয় এক ছেলে সন্তানের। নাম রাখা হয় জোহান মিয়া। বর্তমান বয়স প্রায় ১৫ মাস। সকালে খোঁজ নিতে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জন্ম নেওয়া শিশুটি বাড়ির উঠানে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কাছে ডাকলে শিশুটি আগলে ধরে মাকে।
শিশুটির মা জানান, বাবা দিনমজুর। মা পরের বাড়িতে কাজ করে। নিজের সন্তান নিয়ে কোনোমতে বেচে আছি। ভবিষ্যতে কি হবে তা তিনি বলতে পারছেন না। নিজের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতি না পেলেও তাঁকে প্রতিনিয়তই শুনতে হচ্ছে বিভিন্ন অপবাদ। তাকে যারা ধর্ষণ করেছে তারা জামিনে এসে বাড়িতেই থাকছে। অবাধে চলাফেরা করছে চোখের সামনে দিয়ে।
এর মধ্যে ধর্ষণে অভিযুক্ত মোবারক হুমকি দিয়ে বলে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই মামলা ফিনিস হবে। এরপর মিথ্যা অপবাদের জন্য বাড়ি ছাড়া করা হবে। এ অবস্থায় একধরনের ভয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।
মামলাটি চতুর্থ তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছেন নান্দাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসেম। তিনি বলেন, গত ১৮ আক্টাবর ২০১৯ সালে তিনি আদালতে ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এর মধ্যে জন্ম নেওয়া সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের ডিএনও টেস্ট হয়নি। এখন এটা আদালতের বিষয়।