পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বীজের বাজারেও। গত বছর যে পেঁয়াজ এর বীজ বিক্রি হতো ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি সেই বীজ এবার বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়।
একই সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজের কন্ধ বা গোটার দামও। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের আবাদ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে দুই উপজেলার কৃষকদের।
পেঁয়াজ চাষিরা জানান, ভালো দাম দেখে পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়ার কৃষকেরা এবার পেঁয়াজের আবাদে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার প্রতি কেজিতে পেঁয়াজ বীজের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৩.৫ হাজার টাকা। গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ১২ শত থেকে ১৫ শত টাকায়। কিন্তু এবার প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়।
কৃষকদের অভিযোগ, চাহিদা বেশি হওয়ার সুযোগ নিয়ে বীজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীরা এবার পেঁয়াজ বীজের দাম কৌশলে বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া ও বেড়া দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে পরিচিত। দুই উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে দুই পদ্ধতিতে। এর একটি হলো মূলকাটা ও অপরটি হলো হালি। মূলকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়।
এই পদ্ধতিতে অঙ্কুরিত পেঁয়াজ জমিতে রোপণ করা হয়। মূলকাটা পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। অন্যদিকে হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে মার্চ-এপ্রিলে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। হালি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানান, দুই উপজেলায় পেঁয়াজের মূল যোগান আসে হালি পদ্ধতির পেঁয়াজ চাষ থেকে। হালি ও মূলকাটা মিলিয়ে এবার সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর এবং বেড়া উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এর মধ্যে সাঁথিয়ায় ১৩ হাজার ৭৫০ ও বেড়ায় ৩ হাজার একশো হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
হালি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদের জন্যই পেঁয়াজ বীজের প্রয়োজন। কৃষকেরা দুই উপজেলার উঁচু জমিতে ইতিমধ্যেই পেঁয়াজের চারার জন্য বীজতলা তৈরি শুরু করেছেন। মাস খানেকের মধ্যে দুই উপজেলায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চারা তৈরির জন্য আবাদ শুরু হবে। এজন্য কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু পেঁয়াজ বীজের অগ্নিমূল্যের জন্য কৃষকেরা বীজতলা তৈরি নিয়ে চরম সংশয়ে রয়েছেন।
চড়া দামের বীজে পেঁয়াজ আবাদের পর উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েও ভাবছেন কৃষকরা। সাঁথিয়ার কাশিনাথপুরের ভাই ভাই বীজ ভান্ডারের মালিক এমদাদুল হক জানান জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের বীজের দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। এত চড়াদামের কারণে বীজ বিক্রি কম হচ্ছে। এছাড়া তাঁদের লাভও হচ্ছে গতবারের তুলনায় কম।
বেড়ার নলভাঙ্গা গ্রামের মৌসুমী বীজ বিক্রেতা আরব আলী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজের বীজ এনেছি। কিন্তু এবার পাইকারি দরে বীজ আনতে গিয়ে নিজেই অবাক হয়েছি। যে দামে বীজ কিনেছি সেই দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেঁয়াজের ভালো দাম দেখে এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু পেঁয়াজ বীজের দাম এত বেশি হওয়ায় আবাদ করতে সাহস পাচ্ছি না।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী ও বেড়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজমত আলী জানান, স্থানীয় ভাবে দুই উপজেলায় সামান্য কিছু পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন হয়। কিন্তু চাহিদার বেশির ভাগ পেঁয়াজ বীজই আসে রাজশাহী ও ফরিদপুর থেকে। গত বছর শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ও কৃষকেরা ভালো দাম পেয়ে বীজের জন্য না রেখে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়ায় সারা দেশেই এবার পেঁয়াজের বীজের উৎপাদন কম হয়েছে। এ কারণে বীজের দামও বেশি।