পাবনার বেড়ায় উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে লাঞ্ছিত করেছেন পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন। সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বিষয়টি সতত্যা নিশ্চিত করেছেন।

এসময় ঘটনাস্থলে একাধিক জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন উপজেলার কাজিরহাট ও নগরবাড়ি ঘাট ইজারা সংক্রান্ত একটি লিখিত রেজুলেশন ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে অনুমোদনের জন্যে চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি নীতিমালা বহির্ভুত হওয়ায় ইউএনও তা অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানান।

এ নিয়ে মেয়র বাতেন তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করেছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপস্থিত একাধিক জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাজিরহাট ও নগরবাড়ি ঘাট সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে দেয়ার একটি লিখিত সিদ্ধান্তের রেজুলেশন অনুমোদন দিতে বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি মেয়রের এখতিয়ার বহির্ভুত এবং বিধিসম্মত নয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা অনুমোদন সম্ভব নয় বলে জানান।

এসময় বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন চরম উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় এবং তাকে মারতে উদ্যত হলে সভায় উপস্থিত অন্যরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়। সভায় উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও সকল কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার বিস্তারিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এর চাইতে বেশি কিছু আর বলতে পারছি না।

এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের মোবাইল ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, বেড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন, পুরান ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ, জাতসাকিনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল হোসেন, আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেমসহ উপজেলা সকল সরকারি দপ্তর প্রধান।

প্রসঙ্গত, বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক ইউপি চেয়ারম্যানের চাল চুরির ঘটনায় তার পক্ষে তদবির করায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।